ব্যাটংয়ে বড় পুঁজির বোলিংয়ে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট নিয়ে উদযাপনে মেতে উঠল শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। তারা হয়তো ভাবতেও পারেননি, পরের উইকেটের জন্য কতটা অপেক্ষা তাদের করতে হবে! দ্বিতীয় উইকেট এমন এক বন্ধন গড়লেন মিজানুর রহমান ও মাহফিজুল ইসলাম, যা আর ভাঙতেই পারলেন না শাইনপুকুরের বোলাররা। মাহফিজুলের সঙ্গে ম্যারাথন জুটি গড়ে ৪২তম ওভারে পেশির টানে মাঠ ছেড়ে যান মিজানুর। তবে এর আগেই এমন এক সীমানায় পৌঁছে যায় এই জুটিতে, যেখানে এত দিন পা পড়েনি বাংলাদেশের কারও। গতকাল শুক্রবার বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে শাইনপুকুরের ২৮৮ রানের জবাবে দ্বিতীয় উইকেটে ২৫০ রান যোগ করেন মাহফিজুল ও মিজানুর। দুজনই পান তিন অঙ্কের উষ্ণ ছোঁয়া। দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দ্বিতীয় উইকেটে এটিই প্রথম আড়াইশ রানের জুটি। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে এত দিন দুইশ ছোঁয়া দ্বিতীয় উইকেট জুটিই ছিল স্রেফ একটি। ২০১৮ সালে কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের বিপক্ষে ব্রাদার্সের হয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ২০৫ রান যোগ করেছিলেন জুনায়েদ সিদ্দিক ও মাইশুকুর রহমান। ঢাকা লিগ ছাপিয়ে সব মিলিয়ে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দেশের দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি ছিল সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েসের। ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২২০ রানের জুটি গড়েছিলেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এই সংস্করণে যে কোনো উইকেটে বাংলাদেশের এটি ষষ্ঠ আড়াইশ ছোঁয়া জুটি। ২০১৯ সালের প্রিমিয়ার লিগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে রেকর্ড ৩১২ রান যোগ করেছিলেন আবাহনী লিমিটেডের দুই ওপেনার সৌম্য ও জহুরুল ইসলাম। সেটিই এখন পর্যন্ত দেশের লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে একমাত্র তিনশ রানের জুটি। ওই ম্যাচে ১৪ চার ও ১৬ ছক্কায় ১৫৩ বলে ২০৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন সৌম্য। যা এখনও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের একমাত্র ডাবল সেঞ্চুরি। ম্যাচে বড় লক্ষ্যে শুরুতে ইমতিয়াজের উইকেট হারালেও দলের ওপর চাপ আসতে দেননি মিজানুর ও মাহফিজুল। শুরু থেকেই বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান করতে থাকেন তারা। ৫৭ বলে পূর্ণ হয় জুটির পঞ্চাশ। একই ছন্দে এগোতে থাকেন দুই ব্যাটসম্যান। ৫৬ বলে ফিফটি করেন মিজানুর। কিছুটা সময় নিয়ে মাহফিজুলের পঞ্চাশ হয় ৬৭ বলে। পরের পঞ্চাশ ছুঁতে ৪০ বল খেলেন মিজানুর। ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৯৬ বলে তিনি করেন লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। নিজের আগের সর্বোচ্চ ১১৫ ছাড়িয়ে আরও এগিয়ে যান ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৪২ ওভার শেষে পেশিতে টান লাগায় মাঠ ছাড়েন ১০ চার ও ৫ ছক্কায় ১২৯ বলে ১৩৬ রান করা মিজানুর। আগের ম্যাচেও ৭৩ রান করে একই ভাবে ফিরতে হয়েছিল তাকে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ পান মাহফিজুল। তবে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারেননি। ৫ চারের সঙ্গে ৪ ছক্কায় ১২৭ বলে ১১৪ রান করে আউট হন ২০ বছর বয়সী ওপেনার। প্রথম রাউন্ডে ৮৪ রান করেছিলেন তিনি। ম্যাচ জিততে কোনো সমস্যা হয়নি ব্রাদার্সের। তিন উইকেট হারিয়ে সাত বল বাকি রেখে লিগে নিজেদের প্রথম জয় পায় তারা। ম্যাচের প্রথমভাগে ৫ রানের আক্ষেপে পোড়েন শাইনপুকুরের রহিম আহমেদ। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও ৯৫ রানে আউট হন ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। ৯৬ বলের ইনিংসে ৫টি করে চার-ছক্কা মারেন তিনি। এছাড়া রায়ান রাফসান রহমান ৪৭, অনিক সরকার ৪০ রান করলে তিনশর কাছাকাছি যায় শাইনপুকুর। তবে সেটি যথেষ্ট হয়নি। ব্রাদার্সের পক্ষে ৫০ রানে ৫ উইকেট নেন আল আমিন হোসেন। প্রায় ১৪ বছরের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে এটি তার সপ্তম ৫ উইকেট।