বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্র শুরুর আগে প্রস্তুতির পরিকল্পনাটা দুর্দান্ত ছিল বাংলাদেশ দলের। লক্ষ্য ছিল জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে প্রস্তুতি নেওয়া। তার আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ ও উইন্ডিজের মাটিতে পাওয়া টেস্ট জয়ে এই ফরম্যাট নিয়ে নতুন স্বপ্ন ধরা দিয়েছিল। তবে জিম্বাবুয়ের কাছে সিলেট টেস্ট হেরে সেসব স্বপ্ন জলাঞ্জলি যায়। ওয়ানডেতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ব্যর্থতা, আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির ব্যর্থতা মিলে বাংলাদেশ ক্রিকেট তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তবে সেসব ভুলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্র শুরু করতে চায় টাইগাররা। সে লক্ষ্য সামনে রেখে আজ গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস। এই টেস্ট দিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (২০২৫-২০২৭) চতুর্থ আসরের পথচলা শুরু হবে।
তৃতীয় ও সর্বশেষ আসরে সপ্তম স্থানে ছিল বাংলাদেশ। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিন আসর মিলিয়ে এটি সেরা ফলাফল টাইগারদের। গত আসরে ষষ্ঠ স্থানে ছিল শ্রীলঙ্কা। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ঐ আসরের শিরোপার স্বাদ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সবশেষ আসরে ১২ ম্যাচ খেলে ৪টিতে জয় ও ৮টিতে হারের স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে টাইগাররা। এছাড়া নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১টি করে ম্যাচ জিতে তারা। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবারের মতো এবং ২০০৯ সালের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের নজির গড়ে বাংলাদেশ।
এবার ভাল শুরু চান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পেছনে নয়, শান্ত শুধু সামনে তাকিয়ে আছেন। নতুন করে নতুন অভিযানে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত তিনি। তামিম-সাকিবরা না থাকায় এখন শান্ত-লিটন-মিরাজদের হাতেই বাংলাদেশের ‘ব্যাটন’। সেই ব্যাটন হাতে নিয়ে আগানোর কথা বলে শান্ত জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের জন্য সাকিব ভাই তামিম ভাই অনেক অবদান রেখেছেন। তারা অনেকদিন খেলেছেন। আমাদের যারা এখন খেলছেন তারা বেশ অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। তারা ভালো ক্রিকেট খেলতে মুখিয়ে আছে। আমরা পেছনে ফিরে যেতে চাই না। আমি বিশ্বাস করি আমরা তাদের উত্তরসূরী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েই ক্রিকেটটা খেলব। দলের ভালোর জন্য।’
নতুন শুরুতে নিজের দল নিয়ে খুশি শান্ত। দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। বাকিদের নিয়ে এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে কতদূর এগোতে চান তা দেখবেন শান্ত। সেক্ষেত্রে এই দুই টেস্টের সিরিজ হবে নিজেদের দেখে নেওয়ার সেরা মঞ্চ। শান্ত জানিয়েছেন, ‘আমি অনেক দূরে চিন্তা করতে চাচ্ছি না। নতুন চক্র। শুরুটা যদি আমরা ভালো করতে পারি। তখন ডে বাই ডে আমরা আসলে কি যোগ করা যায় বা নতুন কি প্রয়োজন তা দেখব। পরবর্তীতে আলোচনা করতে পারব। আমার কাছে মনে এই কম্বিনেশন এই দুইটা টেস্ট ম্যাচ কত ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি এটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ ঘরের মাঠে নিঃসন্দেহে শক্তিশালী শ্রীলঙ্কা। তবে সেখানে বাংলাদেশের অতীত রেকর্ড ভালো থাকায় আত্মবিশ্বাসী শান্ত। তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কায় আমাদের ভালো স্মৃতি আছে। লঙ্কান মাটিতে আমাদের শততম টেস্ট ম্যাচ জিতেছি। এটি অবশ্যই আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে। তাদের কন্ডিশনে আমাদের বিশেষ কিছু করার সুযোগ আছে।’
২০১৭ সালে কলম্বোতে নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে শততম ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ঐ জয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ড্র করেছিল টাইগাররা। যা এখনও পর্যন্ত টেস্ট ফরম্যাটে লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সেরা ফলাফল। তবে দুই দলের মধ্যকার বাকি ১২ সিরিজেই হেরেছে টাইগাররা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মোট ২৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। জয় পেয়েছে মাত্র ১টিতে। বাকি ২০ ম্যাচে হার ও ৫টিতে ড্র করেছে টাইগাররা। এবার নিজেদের সেরাটা উজার করে দিতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশ।
শান্ত বলেন, ‘টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের গত আসরে চার ম্যাচ জিতে আমরা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমাদের সেই আত্মবিশ্বাসই দরকার। আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে এবারের আসরে ভালো শুরু করতে পারব।’ জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় দলের সহ-অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশ শিবির। প্রথম টেস্টের আগেই মিরাজ সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরবেন বলে আশাবাদী প্রধান কোচ ফিল সিমন্স।
গত এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এবং উইকেট শিকারী মিরাজ। ৫৯৮ রান করার পাশাপাশি ৪১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। দেশ ছাড়ার আগে ঘরের মাঠে অনুশীলন ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ঐ ম্যাচের পর গুঞ্জন ছিল সাদমান ইসলামের সাথে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করতে পারেন অধিনায়ক শান্ত। কিন্তু সিমন্স বা শান্ত দলের একাদশ নিয়ে খোলাসা করেননি। শান্ত যদি ইনিংস শুরু করেন তাহলে টেস্ট প্রত্যাবর্তনের পর মাত্র একটি ম্যাচ খেলেই একাদশের বাইরে ছিটকে যাবেন এনামুল হক বিজয়।
বাংলাদেশ দল : নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), সাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মোমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন কুমার দাস, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকের আলী অনিক, মেহেদি হাসান মিরাজ (সহ-অধিনায়ক), তাইজুল ইসলাম, নাইম হাসান, হাসান মুরাদ, এবাদত হোসেন, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা, সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
শ্রীলঙ্কা দল: ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা (অধিনায়ক), পাথুম নিশাঙ্কা, ওশাদা ফার্নান্দো, লাহিরু উদারা, দিনেশ চান্দিমাল, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু মেন্ডিস, পাসিন্দু সোরিয়াবান্দারা, সোনাল দিনুশা, পবন রত্নায়েক, প্রবাথ জয়াসুরিয়া, থারিন্দু রত্নায়েক, আকিলা ধনাঞ্জয়া, মিলান রত্নায়েক, আসিথা ফার্নান্দো, কাসুন রাজিথা এবং ইসিথা ভিজেসুন্দারা।