ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ভারত ও বাংলাদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন তা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়। সম্পর্ক যে নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক না হয়ে দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ ও শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত।

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কথা বলেন উপদেষ্টা।

সাক্ষাৎকারটি সোমবার দিবাগত রাতে প্রকাশিত হয়। এতে বাংলাদেশ–ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি দেওয়া, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প–সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করেন উপদেষ্টা।

সাক্ষাৎকারে দুই দেশের সম্পর্কের উত্তেজনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, খোলাখুলি বললে, সম্পর্ক ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ (যখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে)। আমি যেমনটি দেখেছি, শুরুটা খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। কারণ, ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। হয়তো নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে কিছুটা সময় লেগেছে, সে কারণে সম্পর্কে অনেক বৈরী মনোভাব এবং অস্বস্তি অবশ্যই ছিল।

তিনি বলেন, তবে সম্পর্কের এই উত্তেজনা ছয় মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের এমন একটি পরিবেশের প্রয়োজন, যেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায় অবশ্যই আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি।

দুই দেশের মধ্যে খুব বেশি উদ্বেগ থাকা উচিত নয় জানিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া উচিত, যা ইতিমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে বাণিজ্যের কথা বলা যায়। বাণিজ্যে অল্প সময়ের জন্য মন্দা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু আবার তা চাঙা হয়ে উঠেছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ, অন্তত বেসরকারি খাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আগ্রহ আছে। উভয় দেশেরই একে অপরের কাছে স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের তার প্রতি যত্ন নেওয়া দরকার।

তৌহিদ হোসেনের কাছে প্রশ্ন ছিল, ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে যেই সুসম্পর্ক বজায় ছিল সেটা ফিরে আসতে পারে কি না। জবাবে উপদেষ্টা বলেন, আমরা শুধু গত ১৫ বছর কেন দেখব? এমনকি বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ এ আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল।

তিনি বলেন, তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই দেশের কেন্দ্রে যে সরকারই হোক, যে দলই ক্ষমতায় থাক না কেন, তা আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়। কারণ সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল। আমি বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই বুঝতে পারছে তাদের স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।

সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা নিয়ে অভিযোগের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু বা অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায় মুসলিম বা সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মতোই সমান নাগরিক। তারা সম–অধিকার এবং একই রকম সুরক্ষা পাওয়ার অধিকারসম্পন্ন নাগরিক। এবং এটা বাংলাদেশ সরকারের কাজ, তারা এটা করছে, দেশের অন্য যেকোনো নাগরিকের মতোই তাদের (সংখ্যালঘুদের) সুরক্ষা দেওয়া।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদনের আগেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। এটা বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব এবং সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমি মনে করি না এই বিষয়ে কথা বলা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের জন্য সঠিক। এটি সম্পূর্ণরূপে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং বাংলাদেশ সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের উপদেষ্টা পরিষদে কমপক্ষে চারজন সদস্য আছেন, যাঁরা মানবাধিকারকর্মী এবং তাঁরা বহু বছর ধরে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে আসছেন। তাঁরা নিজেরাই সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন।

আবা/এসআর/২৫

ভারত,সম্পর্ক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত