ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ঝিনাই নদী

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ঝিনাই নদী

দখল দূষণে ঐতিহ্য হারাচ্ছে টাঙ্গাইলের কালিহাতির কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ঝিনাই নদী। দীর্ঘ দিন ধরে পরিবেশ দূষণের তোয়াক্কা না করে নদীর ডান ও বাম তীরে গড়ে ওঠা অটোমেটিক রাইচ মিল, ড্রায়ার মিল ও অপরিকল্পিত বসত বাড়ির ময়লা আবর্জনায় নদীর গতিপথ প্রায় বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। প্রভাবশালীদের দখল দৌরাত্বে ক্রমশ সংকোচিত হচ্ছে ঝিনাই নদীর গতিপথ। এক সময় এই নদী স্থানীয়দের ব্যবসা বাণিজ্যের একমাত্র পথ হিসেবে ব্যবহার হত। কালের আবর্তে আজ তা শুধুই ¯মৃতি। জেলার কালিহাতী উপজেলার উত্তর বেতডোবা এলাকার উপর দিয়ে বয়ে গেছে ঝিনাই নদী। একসময় খরস্রোতা নদীর জল তরঙ্গের সাথে মেতে উঠত জলজ প্রাণী। আজ সেই নদী দখলে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী একই পরিবারের পাঁচ ভাই। তারা হলেন, ফকির অটো রাইস মিলের সাত্তার, মুক্তার, সালাম, সোরহাব ও হাসান। স্থানীয়ারা জানান, এই নদীর ফটিকজানি নদী নামে পরিচিত ছিল। সরকারি তালিকায় এনদী এখন ঝিনাই নদী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিনিয়ত মিল ফ্যাক্টরি গড়ে তুলছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এলাকাবাসীর দাবি সরকার আসে, সরকার যায়। দিন দিন প্রভাবশালীদের দখল দারিত্বে নদীর প্রসস্থতা কমে যায়। দখলদারদের বিরুদ্ধে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয় না। কোন দিন উদ্ধার হবে কিনা এনিয়েও শংকা করছেন এলাকাবাসি।

এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীতে দুপারের প্রতিটি বাড়ির মানুষ গোসল করতেন। আজ সেখানে গোসল করা যায় না। গোসল করলে বিষাক্ত পানির কারনে মানুষ খোজপাঁচড়া, এলার্জিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিষাক্ত পানির কারনে মাঝে মধ্যে মাছ মরে ভেসে ওঠে। দখলদারদেও রাইস মিলের কেমিক্যাল যুক্ত পানি নদীতে ফেলার কারনে বিষাক্ত হচ্ছে নদীর পানি। স্থানীরা দখল দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। এতে মানুষ ফিরে পাবে পরিবেশের ভারসাম্যতা এবং হুমকি থেকে রক্ষা পাবে জলজ প্রাণী। বেতডোবা গ্রামের দুলাল সাহা জানান, বাংলাদেশ উন্নত হয়েছে কিন্তু নদী নালার কোন উন্নয়ন হয়নি। ঝিনাই নদী জবলদখলের কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।

কৃষ্ণ চন্দ্র পাল জানান, ঝিনাই নদীতে প্রতিদিন মিল ফ্যাক্টরির ময়লা আবর্জনা ফেলার কারনে দূষিত হয়ে পড়েছে নদীর পানি। ভরে গেছে, এছাড়া নদীর দুই পাশেই দখল করে নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা। মিল মালিক অজয় কুমার দে জানান, তারা যে মিল ফ্যাক্টরি করেছেন সেটি নদীর পাশে কিন্তু নদীর জায়গা নয়। তাদের জমির সিএস, আরএস সব রেকর্ডই রয়েছে। মানুষ ভাবে তারা নদী দখল করে রেখেছেন কিন্তু তাদের ধারণা ভুল। রাইস মিল ফ্যাক্টরির মালিক সোরহাব জানান, ঝিনাই নদী প্রতি বছরই ভেঙে পড়ে। এতে তাদের মিলটি হুমকিতে পড়ে। তাই প্রতিবছর বাঁশ কাঠ এবং মাটি দিয়ে বেঁধে রক্ষা করতে হয়। মানুষ ভাবে তারা নদী দখল করে নিচ্ছেন।

কালিহাতী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সিফাত বিন সাদেক জানান, কালিহাতী উপজেলায় একটি অংশ দিয়ে ঝিনাই নদী বহমান রয়েছে। নদীর তীর দিয়ে যে সব মিল ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেছে সেগুলো তিনি পর্যবেক্ষন করে দেখবেন। যদি কেউ নদী দখল করে মিল করে থাকেন পরিমাপপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত