ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কুষ্টিয়ায় দেড় মাসে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট

কুষ্টিয়ায় দেড় মাসে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট

বেপরোয়া গতি, অবৈধ যানবাহন, অদক্ষ চালক ও ট্রাফিক আইন অমান্য করে কুষ্টিয়া জেলার মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়ক, গ্রাম্য সড়কগুলোতে প্রতিদিনই ঘটে চলেছে ছোট বড় সড়ক দুর্ঘটনা। কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। এতে একদিকে যেমন প্রাণহানীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে পঙ্গুত্ব বরণ করছে দুর্ঘটনায় আহতরা। হতাহতের তালিকা হচ্ছে দীর্ঘ। কুষ্টিয়ায় গত দেড় মাসে ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আটজন।

গত দেড় মাসে কুষ্টিয়া জেলায় ১২টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আটজন। এতে আহত হয়েছে অন্তত ৫০ হতে ৬০ জনেরও বেশি। এছাড়াও ছোট ছোট দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। মানুষের পাশাপাশি পশুরাও বাদ যাচ্ছে না। গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নাহিদুল ইসলাম রূপল (৩২) নামে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন। ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে তিনি নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কুষ্টিয়া সদরের লাহিনী বটতলা এলাকায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নাহিদুল ইসলাম রূপল জেলা শহরের আবুল কাশেম লেনের আড়ুয়াপাড়ার আইয়ুব ইসলামের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক। এই ছাত্রদল নেতার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ায় গত দেড় মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহতের ঘটনা ঘটলো।

কুষ্টিয়া বিআরটিএ সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ায় নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা রয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৪০৮টি। বিভিন্ন প্রকার এসব যানবাহন কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন সড়কে চলাচল করছে। যার মধ্যে মাঝারি মোটর সাইকেল ৭১ হাজার ১৯৮টি, বড় মোটর সাইকেল ২৯ হাজার ২০৩টি এবং ছোট মোটর সাইকেল ২ হাজার ৬৭৫টিসহ মোট ১০ লাখ ৩ হাজার ৭৬টি মোটর সাইকেল। অন্যান্য যানবাহনের মধ্যে মোটরসাইকেলই বেশি।

অন্যদিকে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলায় গত মে মাসে ৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এই মাসে মারা যান একজন। আহত হন চারজন। এসব দুর্ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ১টি। অন্যদিকে জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৯টি। আর এই ৯টি ঘটনায় প্রাণ হারান সাতজন। প্রাণে বেঁচে আহত হন সাতজন। তবে জুন মাসে ৯টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও মামলা হয়েছে মাত্র ২টি। আর প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ১টি। এর মধ্যে মে মাসে ট্রাক দুর্ঘটনা ঘটে ৩টি, বাস ১টি, ট্রাক্টর ১টি বাইসাইকেল ১টি এবং মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ১টি। গত ১৪ জুন কুষ্টিয়া-রাজবাড়ি মহাসড়কের মোড়াগাছা-হাসিমপুর এলাকায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। ১৯ মে কুমারখালীতে ইটবাহী ট্রাক্টরের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী সুরুজ আহমেদ (২৩) নিহত হন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্টিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান কারণ হলো বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিত যান চলাচল, অবৈধ যানবাহন, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক, ট্রাফিক আইন না মানা, সড়কের খারাপ অবস্থা ও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব। প্রতিরোধে ট্রাফিক আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন, অবৈধ যানবাহন বন্ধ, চালকদের প্রশিক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

কুষ্টিয়া বিআরটিএ সার্কেল অফিসের সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি.) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হলো সচেতনতার অভাব। পাশাপাশি ট্রাফিক আইন সম্বন্ধে না জানা। এছাড়া সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমরা বিভিন্ন প্রোগ্রাম করছি। সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

কুষ্টিয়ার চৌড়হ্াস হাইওয়ে থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন বলেন, চৌড়হাস হাইওয়ে থানার অধিনে কুষ্টিয়া জেলার ছয়টি থানার মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার রাস্তা কভার করি। আমরা সারা বছরই মামলা দিই। মাসে মামলা দেওয়ার নির্দিষ্ট একটা টার্গেট আছে। নছিমন, করিমন আটকসহ যত ধরনের কাজ আছে আমরা করি। আমাদের জনবল সংকটের কারণে পুরোপুরিভাবে আমরা সড়কে চলাচলরত যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি অবৈধ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।

তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়ার মধ্যে বহলবাড়িয়া একটি ব্লাকস্পট জায়গা। এ জেলার মধ্যে বেশি দুর্ঘটনা স্পটগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। আমাদের রাস্তায় যে পরিমাণ গাড়ি চলতে পারে, তার চেয়ে গাড়ির পরিমাণ বেশি। এরমধ্যে ইজিবাইকের সংখ্যা বেশি, যা হাইওয়ে সড়কে চলাচল নিষেধ থাকলেও চলাচল করছে। আমরা তাদের সরাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। অবৈধ নছিমন, করিমন আলমসাধু, ভডভডিসহ অবৈধ যানবাহন ধরে আমরা মামলা দিচ্ছি। উপরের নির্দেশনা হলো অবৈধ যানবাহন মহাসড়কে উঠতে পারবে না। সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখি। তবে হানড্রেট পার্সেন্ট পারি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত