পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গ্রামীণ হাট বাজারে ভাসমান সেলুনে চলছে তার জীবিকা। নাম তার আব্দুল রসিদ, বয়স ৯৫। সে এক সময় গ্রামগঞ্জে যাত্রাপালা করে বেড়াতেন। এখন পেশায় একজন নরসুন্দর। বয়সের ভারে নুয়ে গেছেন। তবুও তিনি খালি চোখে অন্যের চুল দাড়ি কাটছেন নিখুতভাবে। এই কাজে বেশ সুনাম রয়েছে তার। তাই তার কাছে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ছুটে আসে চুল দাড়ি কাটতে। এমধ্যে অধিকাংশই নিম্ন আয়ের মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার প্রতিটি হাটেই তার সেলুন থাকে রাস্তার পাশে। চুল কাটেন ৪০ টাকায়। আর সেইভে ৩০ টাকা দিতে হয় তাকে। আবার অনেক দরিদ্র মানুষকে তিনি বিনা পয়সা চুল দাড়ি কেটে দেয়। তার সেলুনের সরঞ্জাম বলতে একটি বড় আকারের আয়না, চেয়ার, চুল কাটা মেশিন, কেচি, খুর, স্যাভলন, সেইভইন ক্রিম রয়েছে। এই ভাসমান সেলুন দোকানির বাড়ি পর্শ্ববর্তী আমতলী উপজেলার পুজাখোলা গ্রামে।
এদিকে প্রতি সাপ্তাহিক হাটের দিন কলাপাড়া পৌর শহরের সুরেন্দ্র মোহন সড়কে গাছের সঙ্গে একটি আয়না সাটিয়ে ডালায় তার যন্ত্রপাতি সাজিয়ে চুল ও দাড়ি কাটেন। কম টাকায় চুল ও দাড়ি কাটা যায়, তাই তার ভাসমান সেলুনে ছুটে আসছে একের পর এক নিম্ন আয়ের মানুষ।
ভাসমান সেলুন ব্যাবসায়ি আব্দুল রসিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এক সময় গ্রামগঞ্জে যাত্রাপালা করে বেড়াতাম। পাশাপাশি প্রায় ৬০ বছর ধরে এ কাজ করছি। এখনও খালি চোখে চুল কাটছি। আগে কেচি দিয়ে চুল দাড়ি কাটতাম। সেই সময় পাঁচ দশ টাকা কামাই করতে খুব কষ্ট হতো। এখন মেশিন দিয়েই চুল কাটছি। প্রতিহাটে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয়। তবে তার আয়ে সংসারে স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে সুখেই আছেন বলে তিনি জানান। চুল দাড়ি কাটতে আসা দিনমজুর মুনসুর আলী বলেন, তারা স্বল্প আয়ের মানুষ। অন্যের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। সেলুনে গিয়ে চুল দাড়ি কাটতে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাগে। আমি এখানে এসে চুল দাড়ি কেটেছি মাত্র ৮০ টাকায়। রিকশা চালক বেল্লাল হোসেন বলেন, তার কাছে মাত্র ৪০ টাকায় সেইভ করেছি। তবে সে এই বয়সে খালি চোখে চুল দাড়ি ভালই কাটেন। চা বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, তার কাছে বেশি ভাগ নিম্ন আয়ের লোকজন চুল দাড়ি কাটতে আসে। কম টাকায় চুল দাড়ি কাটা যায় তাই প্রতি হাটের দিনে গ্রাম গঞ্জের সাধারণ মানুষের ভিড় থাকে। নাট্যকর স্বজল কর্মকার বলেন, ছোটবেলায় হাটে গিয়ে রাস্তার পাশে বসা ভ্রাম্যমাণ সেলুনে আমিও চুল কেটেছি। এখন এসি ননএসি বড় বড় সেলুনের ভিড়ে সেই দৃশ্য হারিয়ে গেছে। তবে আব্দুল রসিদ সেই পুরনো ইতিহাস ধরে রেখেছেন।