ঢাকা মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা

মেলখুম গিরিপথে গিয়ে বাড়ছে মৃত্যু
নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও ছুটে যাচ্ছেন পর্যটকরা

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দুর্গম পাহাড়ে অবস্থিত মেলখুম গিরিপথ। গহীন পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলা এ গিরিপথ যেন এক রহস্যময় জগৎ। সমতল থেকে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বালি পাথরের পাহাড়ি দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় মেলখুমে। প্রতি পদে পদে সেখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় প্রকৃতির রূপ। রয়েছে আলো আঁধারের খেলা। এসবের টানে প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটে আসেন মেলখুমে। তবে পাহাড়ি এই ঝিরিপথের বিপদসমূহের সম্পর্কে না জেনে ভিতরে ঢুকে এরইমধ্যে ঘটেছে প্রাণহানির ঘটনা। পথ হারিয়ে জীবন ঝুঁকির ঘটনা ঘটছে অহরহ।

সর্বশেষ গত ৯ জুলাই বেড়াতে গিয়ে পাহাড় থেকে পড়ে মারা গেছে দুই বন্ধু। আহত হয়েছে আরও তিনজন। এরআগে আরও প্রায় ১৫ জন পর্যটক মেলখুম গিয়ে পথ হারিয়েছেন। দুর্গম হওয়ায় বনবিভাগ মেলখুম যাওয়া নিষিদ্ধ করলেও পর্যটকরা তা মানছেন না। অতি উৎসাহিত হয়ে ছুটে যাচ্ছে পর্যটকেরা। জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের সোনাপাহাড়ের গহীন পাহাড়ের এ গিরিপথ নিয়ে রহস্যের যেন শেষ নেই। কি আছে সেখানে? কেন এতোটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় সেখানে যেতে হয়? দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বালি ও পাথরের ঝিরিপথ ধরে হাঁটার পর মিলবে মেলখুমের প্রবেশমুখ। এরপর দুই পাশে দেখা যাবে একশ থেকে দেড়শ ফুট উঁচু উঁচু পাহাড়। যেখানে আলো আঁধারির খেলাসহ বৈচিত্রময় প্রকৃতি। খুম (দুর্গম একটা স্থান) পার হওয়ার পরে আপনি অল্প পানিতে আপনি হেঁটে যাবেন, দু’পাশের পাথুরে দেয়াল বেয়ে আপনার গায়ে টুপটাপ পানির ফোঁটা পড়ছে, এখানে ভুতুড়ে নির্জনতা, একটু পরপর সূর্য আলো ছায়ার খেলা খেলছে। দুর্গম ভুতুড়ে এই স্থানে যেতেই কিন্তু রয়েছে প্রাণনাশের হুমকী। সাঁতার না জানলে খুমের পানিতে নামলে সেখানে কোনো কোনো ঝুকিপূর্ণ স্থানে তলিয়ে যাবার ও সম্ভাবনা থাকে। আর যদি পাহাড় বেয়ে নামেন, তাহলে অবশ্যই দড়ি নিয়ে যেতে হবে তা ও সেই দড়ি যথাযথ স্থানে আটকানোর জন্য প্রয়োজন যথাযথ প্রশিক্ষণ। মোটামুটি চার-পাঁচতলা বিল্ডিং সমান উচ্চতা আপনাকে দড়ি বেয়ে নামতে হবে। এজন্য খুমে সাঁতার কেটে যাওয়াটা সহজ।

২০২৩ সালে মেলখুম গিরিপথে কয়েকজন পর্যটক পথ হারিয়ে ফেলেন। দুই দফায় হারিয়ে যাওয়া কয়েক জন হতাহত হবার পর পর্যটকদের বার বার উদ্ধার করে আনে ফায়ার সার্ভিস ও জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ। ২০২৩ সালের ১৫ জুন থেকেই সেখানে বন বিভাগ পর্যটক নিষেধাজ্ঞা সংবলিত সতর্কীকরণ ব্যানার পেস্টুনও টাঙিয়ে দেয়। এরপর ও বন বিভাগের কর্মকর্তারা পর্যটকদের গিরিপথে যাওয়ার জন্য নিষেধ করাসহ বাধা দেওয়ার পর ও কেউ কেউ অন্য সড়ক ব্যবহার করে মেলখুম গিরিপথে পৌঁছাচ্ছে। এবার গত ৯ জুলাই সেখান থেকে উদ্ধার করা হলো দুই শিক্ষার্থী বন্ধুর লাশ। এছাড়া আহত হয় তিনজন। আহত হয়ে জীবিত ফিরে আসা ৩ জনের চোখে মুখে ছিল ভয় ও আতঙ্কের ভয়াবহ চিত্র। স্থানীয়রা জানান, পাহাড়ি ঝুকিপূর্ণ স্থানে ভ্রমনের জন্য সাধারণত ওজন বহন করে উপরে ওঠা, সিঁড়ি বিহীন উপরে ওঠা, রোপ টেকনিক, নট বাঁধা, এবং সুরক্ষা সরঞ্জামসহ এবং প্রাথমিক চিকিৎসার বিভিন্ন জ্ঞান থাকার জন্য বিশেষ ট্রেনিং প্রয়োজন। আবার সাঁতারসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ব্যায়াম এর মাধ্যমে তাদের স্ট্যামিনা, শক্তি এবং সহনশীলতা প্রশিক্ষন প্রয়োজন। না হয় এমন ঝুকিপূর্ণ পাহাড়ে গমন না করাই উচিত। এই বিষয়ে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক হারুন অর রশিদ বলেন, এই মেলখুম ট্রেল এলাকাটি এতোটাই ঝুকিপূর্ণ যে আমাদের বনকর্মীরা ও সেখানে যেতে ভয় পায়। কিন্তু এই তরুণরা অতি উৎসাহি হয়ে দুঃসাহস দেখাতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছে। এমন ঝুঁকির জন্যই আমরা এই ট্রেল এর পথে না যাবার নোটিশসহ সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েছি এবং বিভিন্ন সময় প্রচারণা করছি। কিন্তু সবসময়ের জন্য সব পথে তো আর পাহারাদার বসিয়ে রাখা সম্ভব না। তাই সবাই পারিবারিক সচেতনতা ছাড়া আপাতত কোনো উপায় নেই। এই বিষয়ে মিরসরাইয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার বলেন, যেহেতু কোনো প্রকার প্রশিক্ষণ বা ঝুঁকি এড়ানোর বিকল্প কোনো উপায় নেই। সেহেতু বন বিভাগ বার বার সেখানে না যাবার জন্য নোটিশ দেওয়াসহ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে স্ব স্ব অবস্থান থেকে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া এমন মৃত্যু ফাঁদ থেকে রক্ষার কোনো উপায় আপাতত দেখছি না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত