ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাওরে দেশি মাছের উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে

হাওরে দেশি মাছের উৎপাদন নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নিচে

কয়েক বছর আগেও কিশোরগঞ্জের হাওর পাড়ের বালিখলা মাছের বাজারে দিনে কোটি টাকার দেশি জাতের মাছ বেচা-কেনা হলেও, এখন তা নেমে এসেছে অর্ধেকেরও নীচে। জেলেরা বলছেন, নিয়মিত জাল ফেললেও কয়েক বছর যাবত পর্যাপ্ত মাছ মিলছেনা হাওরে। এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণের পাশাপাশি মানবসৃষ্ট বহুবিদ কারণে হাওরে মাছের উৎপাদন কমছে বলে জানান জেলা মৎস কর্মকর্তা। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় হাওর পাড়ের সবচেয়ে বড় ঐতিয্যবাহী বালিখলা মাছের বাজার। জেলার হাওরাঞ্চল ছাড়াও সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা থেকে এ বাজারে প্রতিদিন মাছ নিয়ে আসেন জেলেরা।

মৎস্য বিভাগের হিসেব মতে হাওরের মিঠা পানিতে প্রাকৃতিক ভাবে ২৬০ প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। অথচ, বর্তমানে বাজারে দেখা মিলে ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির। বাকি মাছের প্রজাতিগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ কারণেও হাওরে মাছের সংখা কমছে বলে ধারণা মাছ ব্যাবসায়ী ও জেলেদের। তাই এ ভরা মৌসুমেও হাসি নেই তাদের মুখে। বালিখলা মাছ বাজারের ব্যাবসায়ী মোতালেব মিয়া বলেন, ‘আগে এ বাজারে ১০০ থেকে ১৫০ জাতের মাছ আসতো, এখন ২০-৩০ জাতের মাছ আসে। হাওরে এখন মাছ খুব কম, ধরতে পারে জেলেরা। তাই বাজারে মাছ কম আসে।’

জেলার মিঠামইন উপজেলার জেলে রবীন্দ্র চন্দ্র বলেন, ‘হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে এখন মাছ পাই না। আগেতো কতক্ষণ মাছ ধরলে অর্ধেক নৌকা ভরে যেতো। এখন মাছ নেই, পানি হয় না খুব একটা, তাই মাছ নেই। বালু জমে উঁচু হয়ে গেছে হাওরের তলদেশ। বালুর মধ্যে মাছ থাকে না। আগে হাওরে মাছ ধরতে গেলে নৌকা ভরে গেছে মাছ দিয়ে। এখন আমরা যারা মাছ ধরি তাতে পূষায় না। মাছ খুবই কম, রোজগারও কম।’ হাওরে মাছের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এর প্রভাব পরেছে ঐতিহ্যবাহী এ মাছের বাজারে। আহরণ কম তাই মাছের আমদানিও কম, বলছেন মাছ ব্যাবসায়ীরা।

বালিখলা মাছ বাজারের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘এই বাজারে আগে প্রতি দিনই প্রায় ১ কোটি টাকার মাছ আসতো। এখন অর্ধেকের চেয়েও নীচে নেমে গেছে। জেলেরা মাছ পায় না। নৌকার তলায় করে কিছু মাছ আনে। মাছের প্রজননই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ মৎস কর্মকর্তারা বলছেন, মাছের সংখ্যা এবং প্রজাতি কমে যাওয়ার কারন হলো হাওরের তলদেশে বালু জমাটসহ জমিতে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক প্রয়োগ। এছাড়াও, শুকনো মৌসুমে সেচের নামে মা মাছ নিধন এবং নিষিদ্ধ জালের ব্যাবহারও এর অন্যতম কারণ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা তা হয় না। হাওরে পানি না হলে মাছের প্রজননে তো বিঘ্ন ঘটবেই। হাওরের তলদেশে বালি জমে তলদেশ উঁচু হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র, বিচরণ ক্ষেত্র, লালন ক্ষেত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমিকে বছরের পর বছর অনিয়ন্ত্রিত মাত্রায় কীটনাশক ব্যাবহার হচ্ছে। কিছু কীটনাশক আছে যার ক্ষতির প্রভাব ১২০ বছর পর্যন্ত থাকে বলে বিজ্ঞানীরা মতামত দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে সেচ দিয়ে মা-বাবা মাছ ধরে ফেলা হয়। মা-বাবা না থাকলে সন্তান আশা করা যায় না। কিছুটা বৃষ্টি হলে উজানের ঢলে কিছু মা-বাবা মাছ হাওরে চলে আসে। এগুলো এখানে প্রজনন করলেও উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়ায় তাদের সন্তানদের লালন পালনে অসুবিধা হয়।’ কিশোরগঞ্জের হাওর থেকে বছরে ৬১ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন প্রাকৃতিক মাছ আহরণ করা হয়। এছাড়া জেলায় পুকুরে চাষ করা হয় ৩৩ হাজার ৮৭০ টন মাছ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত