
অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের সহযোগিতা এবং কৃষকের সঠিক পরিচর্যার ফলে এবার লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায়। অন্যান্য সবজির পাশাপাশি লাউ চাষেও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন চান্দিনার প্রান্তিক চাষিরা। তাদের মধ্যে অন্যতম মাইজখার ইউনিয়নের মেহার গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন। লাউয়ের বাম্পার ফলন ও বাজারে ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় তার চোখে-মুখে এখন আনন্দের ঝিলিক। চান্দিনা উপজেলার মহিচাইল, মাইজখার, বরকইট, গল্লাই, হারং, মেহার, চিলোড়া ও এতবারপুরসহ প্রায় সব ইউনিয়নেই শীতকালীন সবজির ব্যাপক আবাদ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা, বিশেষ করে যারা একসময় শুধু ধান বা গতানুগতিক ফসলের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন, তারা এখন সবজি চাষকে লাভজনক পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। এই পরিবর্তনের ফলস্বরূপ, কৃষক আলমগীর হোসেনের মতো অনেকেই সবজি চাষ করে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছেন।
কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় সবজি থেকে দ্রুত আয় পাওয়া যায় এবং বাজারে চাহিদাও অনেক বেশি। তার মতে, সবজি চাষ এখন আর কেবল পারিবারিক চাহিদা মেটানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি একটি লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আধুনিক পদ্ধতিতে তিনি ৩০ শতাংশ জমিতে লাউ চাষ করছেন। আর খেতের অবস্থা এখন খুব ভালো। তিনি ৩০ শতক জায়গা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পঁচিশ হাজার টাকা লাউ বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত তার লাভ হতে খরচ হয়েছে ৮-৯ হাজার টাকা। তবে তিনি আশা করেন, সামনে আরও যে পরিমাণ লাউ দেখা যাচ্ছে আরও আশানুরূপ বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করেন। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি আধুনিক বীজ, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা এবং সেচের বিষয়ে নিয়মিত পরামর্শ পান। আলমগীর হোসেনের এক খেতে লাউ অন্য একটি খেতে রয়েছে ফুলকপি। তিনি আশা করেন, ফুল কপিতেও ভালো ফলন পাবেন।
এখন শুধু লাউ নয়, টমেটো, শসা এবং বেগুনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি শোভা পাচ্ছে। তার ফলানো বিষমুক্ত লাউ এবং অন্যান্য সবজির মান বেশ ভালো হওয়ায় স্থানীয় বাজারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা জানেন চান্দিনার এই এলাকার সবজি সুস্বাদু এবং তুলনামূলকভাবে কম কীটনাশকযুক্ত। স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি চান্দিনার এই সবজি কুমিল্লা শহর, ঢাকা এবং দেশের অন্যান্য স্থানেও নিয়মিত সরবরাহ করা হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকের খেত থেকে সবজি কিনে নিয়ে যাওয়ায় কৃষক সহজেই তার উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর চান্দিনা উপজেলার প্রায় ১৪৯৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন মৌসুমি সবজির আবাদ হয়েছে, যার মধ্যে লাউ অন্যতম।
কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে সবজির উৎপাদন বাড়াতে তারা কৃষকদের সর্বোচ্চ উৎসাহিত করছেন। বিশেষ করে কম্পোস্ট সার, ফেরোমন ফাঁদ এবং জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। কৃষক আলমগীর হোসেনের মতো সফল চাষিরা প্রমাণ করেছেন যে আধুনিক কৃষি পদ্ধতি এবং কৃষি বিভাগের সহযোগিতা পেলে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। তবে এই সাফল্যের মধ্যেও কৃষকদের কিছু সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। যেমন- সেচের উচ্চ ব্যয়, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি এবং অনিয়মিত বৃষ্টিপাত। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা এসব সমস্যা সমাধানে সরকারি সহায়তা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন, যাতে আলমগীর হোসেনের মতো অন্যান্য কৃষকরাও সবজি চাষে আরও বেশি আগ্রহী হন এবং আগামীতে আরও বড় পরিসরে এই সাফল্য ধরে রাখতে পারেন।