
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গতকাল সোমবার সকালে পাশপাপাশি টিনশেডের দুটি কলোনিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে গেছে শতাধিক ঘর, টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মালামাল। এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে নিঃস্ব সেখানে বসবাসরত ৭৫টি শ্রমিক পরিবার। সব হারিয়ে আহাজারি করছেন অসহায় পরিবারের সদস্যরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সহযোগিতা করছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও গাজীপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী এমপি প্রার্থীরাও।
এলাকাবাসী, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, শিল্পধ্যুশিত কালিয়াকৈর উপজেলার পল্লিবিদ্যুৎ দিঘিরপাড় এলাকায় ঘনবসতি গড়ে উঠেছে। ওই ঘনবসতি এলাকায় বায়েজিদ হোসেন ও মহিউদ্দিনের দুটি কলোনি রয়েছে। এসব কলোনিতে বসবাস করে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আসা নিম্ন আয়ের মানুষ। সেখানে ভাড়া থেকে তারা স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কাজ করে পরিবার নিয়ে সুখে বসবাস করে আসছিলেন।
প্রতিদিনের মতো গতকাল সোমবার সকালেও এসব কলোনিতে ভাড়া থাকা শিল্পকারখানার শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে যান। কিন্তু সকাল ৮টার দিকে মাহাউদ্দিনের কলোনির এক ভাড়াটিয়া শাহনাজ বেগমের কক্ষে হঠাৎ করে আগুন জ্বলে উঠে। এসব কক্ষে থাকা শ্রমিকদের শিশু ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা আগুন আতঙ্কে দৌড়ে বাইরে বের হলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান তারা। কিন্তু মুহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা ওই কলোনিসহ আশপাশের কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভাতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় এলাকাবাসী। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ও ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ১০টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ততক্ষণে ভয়াবহ আগুনে দুটি কলোনির ৭৫টি কক্ষ ও এসব কক্ষের ভেতরে থাকা নগদ টাকা, লেপ-তোশক, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন সেখানে বসবাসরত শ্রমিক পরিবারগুলো। সব হারিয়ে আহাজারি করছেন অসহায় পরিবারের সদস্যরা। আগুন আতঙ্কে দ্রুত বেড়িয়ে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
ক্ষতিগ্রস্ত সায়েম হোসেন ও কালাম মিয়া বলেন, আমরা কর্মস্থলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর জানতে পারি কলোনিতে আগুন লেগেছে। কিন্তু আমরা আসার আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সারা বছর গার্মেন্টেসে চাকরি করে কিছু টাকা জমিয়ে জিনিসপত্র কিনেছি। সব আগুনে শেষ হয়ে গেল। জহিরুল ইসলাম বলেন, বিদেশে যাওয়ার লক্ষ্যে আমাদের কক্ষে আড়াই লাখ টাকা রাখা ছিল। সেই টাকাসহ আমার সব আগুনে পুড়ে গেছে। জিয়া উদ্দিন বলেন, আমারও ৫০ হাজার টাকাসহ সব পুড়ে গেছে। মিজানুর রহমানও বলেন, তার ৩ লাখ টাকাসহ সব পুড়ে গেছে। আগুনে পুড়ে সব হারিয়ে এখন আমরা সবাই নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এসব কথা বলতে বলতে আহাজারিতে ভেঙে পড়েছেন অসহায় পরিবারের সদস্যরা।
কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর ইফতেখার রায়হান চৌধুরী জানান, অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ও ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় দুই ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। অগ্নিকাণ্ডে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপন করা যায়নি।
অপরদিকে এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক এইচ এম ফখরুল ইসলাম এবং পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুল আলম তালুকদারসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরে পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে তিন বেলা খাবার ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ২টি করে কম্বল এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও গাজীপুর-১ আসনের বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মজিবুর রহমান তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে প্রতি পরিবারকে ১ হাজার করে টাকা ও তিন বেলা খাবার বিতরণ করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক এইচ এম ফখরুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পরে পৌর ও উপজেলার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের তিন বেলার জন্য ভারি ও শুকনো খাবার এবং কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের জন্য সহযোগিতার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সরকারিভাবে কোন বরাদ্দ পেলে তাৎক্ষণিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে পৌঁছে দেওয়া হবে।