
ইতিহাসের সাক্ষী হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার পাহাড়ঘেরা ফয়জাবাদ বধ্যভূমি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে। বধ্যভূমির বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেলেও তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেই। মাঝে মাঝে চা বাগান কর্তৃপক্ষ এখানে ঝোপঝাড় পরিষ্কার করলেও রক্ষণাবেক্ষণের কেউ নেই। তবে দিবস আসলে কিছুটা সাজানো হয়। এরপর থাকে না খবর।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা নির্জন পাহাড়ের বুকে এ স্থানটি আজ অযত্নে পড়ে থাকা একখণ্ড ইতিহাস। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তঝরা উত্তাল সময়ে পাকবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল পার্শ্ববর্তী শ্রীমঙ্গলে। ক্যাম্পটি টর্চারসেল হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। পাকহানাদার বাহিনীর সদস্যরা হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা ও আশপাশের এলাকার মুক্তিকামী নারী, পুরুষ ও শিশুদের স্থানীয় রাজাকার, আল-বদর ও শান্তি কমিটির সদস্যদের সহায়তায় ধরে ওই ক্যাম্পে নিয়ে যেত।
অত্যাচার-নির্যাতনের পর নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে লাশগুলো বাহুবল উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়নের ফয়জাবাদ হিলসের একটি নির্জন স্থানে গণকবর দিয়ে রাখত। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় রশিদপুর গ্যাস ফিল্ডসংলগ্ন ওই গণকবর থেকে অনেকগুলো মানবকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
অবশেষে ২০০৬ সালে সরকার এটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে টিলায় ওঠার জন্য নির্মাণ করা হয় একটি সিঁড়ি। ওপরে হত্যাকাণ্ডের স্থানটিতে মনোরম একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করা হয়। একই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর এর উদ্বোধন করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শী জানায়, বাহুবল উপজেলার শেষ প্রান্তে ঢাকা-সিলেট ভায়া মৌলভীবাজার সড়কের আমতলী চা বাগানে ঐতিহাসিক এ বধ্যভূমির অবস্থান। উক্ত সড়কে মিরপুর বাজার থেকে এগোলেই জ্বালানি তেল শোধনাগার। এর প্রধান ফটকের ঠিক উল্টো পাশেই এ বধ্যভূমি। আমতলী চা বাগানের ৪নং সেকশনের একটি টিলার ওপর এটি অবস্থিত।
এর চারপাশ টিলায় ঘেরা। কিন্তু দীর্ঘদিন এ স্থানটি চরম অবহেলায় পড়ে আছে। মনোরম এ স্থানটিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন বনভোজনেও আসে। কিন্তু নির্মাণের পর থেকে এটি রক্ষণাবেক্ষণে কারও তেমন কোন উদ্যোগ নেই। ঝোপঝাড়ে ঢেকে গেলে বাগান কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে তা পরিচ্ছন্ন করে।
আমতলী চা বাগানের এক শ্রমিক জানান, এটি নির্মাণের পর থেকে তা মেরামতের উদ্যোগ কখনই কেউ নেয়নি। মাঝে মাঝে বাগান কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে এখানে দায়িত্বরত শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন।
ঘুরতে আসা দর্শনার্থী নুর উদ্দিন সুমন জানান, নির্জন ও মনোরম। স্থানটি ঐতিহাসিক। দ্রুত এটি রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া দরকার।
বাহুবল উপজেলার সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবুল হোসেন জানান- এটি সংস্কারের জন্য তারা অনেক চেষ্টা-তদবির করেছেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এক সময় এখানে কাঁটাতারের বেড়া ছিল। সেটিও কে বা কারা তুলে ফেলেছে। অবিলম্বে এটি রক্ষণাবেক্ষণ করা প্রয়োজন।