ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পাঁচ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে দিল নেসকো

নওগাঁয় বাইপাস সড়ক
পাঁচ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে দিল নেসকো

নওগাঁ বাইপাস সড়কে বিদ্যুৎ সরবরাহের তার সুরক্ষায় নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে ফেলেছে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তালগাছের। প্রকৃতি বিনষ্ট করার কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সচেতন মহল। গাছ ঠিক রেখে বিকল্প ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। নওগাঁ বাইপাস আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার। এ সড়কের দুইপাশে রয়েছে অসংখ্য তালগাছ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রায় দুইযুগ আগে সড়কের দুইপাশে তালবীজ রোপণ করা হয়েছিল। এলাকাবাসীর পরিচর্যায় যা এখন বড় গাছে পরিণত হয়েছে। ছায়া দেওয়ার পাশাপাশি ফলও দেয়। এ গাছ থেকে স্থানীয়দের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও চাহিদা পূরণ হয়।এছাড়া সারি সারি তালগাছের সৌন্দর্য দেখতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকেই আসেন। সম্প্রতি সদর উপজেলার রামভদ্রপুর থেকে খলিশাকুড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের একপাশের ৫ শতাধিক তালগাছের মাথা কেটে ফেলেছে নেসকো। বৈদ্যুতিক তার রক্ষা করতে সড়কের একপাশের গাছ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে মরতে শুরু করেছে গাছগুলো। এরইমধ্যে ৫০টির বেশি গাছ মারাও গেছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

খলিশাকুড়ি গ্রামের বাসীন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে সড়কের দুইপাশে তালবীজ করা হয়েছিল। এরপর গাছে পরিণত হয়। বাইপাস সড়কের দুইপাশে তালগাছগুলো বড় হয়ে বছরের পর বছর ধরে শোভা ছড়াচ্ছে। প্রতি বছর বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন এসে সড়কের একপাশের তালগাছের পাতা ছেঁটে দেন। আর এবার একদম মাথা কেটে দেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর আগে যেসব গাছের মাথা কেটে দেওয়া হয়েছে সেগুলো মারা গেছে। এবার যেসব মাথা কেটে দেওয়া হয়েছে সেগুলোও মারা যাবে। পরিবেশ কর্মী অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে তুলনামূলক বজ্রপাতের হার বেশি। ধান কাটার মৌসুমে বৃষ্টি ও বজ্রপাতের ঘটনায় অনেক শ্রমিক মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই এসব এলাকায় তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অনেক। এভাবে গাছ না কেটে বিকল্প উপায়ে রক্ষা করা যেতো। বিদ্যুৎ বিভাগের এমন কর্মকাণ্ডকে কাণ্ডজ্ঞানহীন মনে হয়েছে। এটি অমানবিক এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করা হয়েছে। তবে বিদ্যুতের খুঁটি সামান্য সরানো হলেই গাছগুলো বেঁচে যেত।

নওগাঁ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল হক বলেন, তালগাছের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে কোনো ধরনের অবগত করা হয়নি। এমনকি গাছ-কাটা ও ছাঁটাইয়ে অনুমোতিও নেয়নি তারা। এরইমধ্যে সড়ক বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিয়ে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

নওগাঁ নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো), উত্তর জোন এর নির্বাহী প্রকৌশলী মিলন মাহমুদ বলেন, ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুবিভাগের তারের সঙ্গে গাছের ডাল ও পাতার স্পর্শে অনেক সময় সমস্যা হয়। বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ গাছের মাথা ও ডাল কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের সমন্বয় সভায় আলোচনা হয়েছে। শুধু তাল গাছের সড়ক না জেলার বিভিন্ন স্থানে তারের আশপাশে যেসব গাছপালা রয়েছে সেসব গাছপালার ডালগুলো ছাঁটাই করা হচ্ছে। তবে তালগাছের বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরবর্তীতে লাইন সরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত