ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না তা জানতে তপশিল ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন। সিলেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আপনি যে আরেকটা বিশেষ দলের কথা বলছেন, দেখেন- আমাদের কাজ হলো যখন আমরা শিডিউল ঘোষণা করি, তার আগে যে ক’টা দল নিবন্ধিত থাকে, ওদের মধ্যে একটা সুন্দর নির্বাচন আয়োজন করা। সময় আসুক দেখবেন, কারা কারা নিবন্ধিত অবস্থায় থাকে। যারা যারা থাকবে, তাদের নিয়ে নির্বাচন করব আমরা। অপেক্ষা করুন, আমরাও অপেক্ষা করে দেখি- ওই সময় পর্যন্ত একটু অপেক্ষা করে দেখি।’
গতকাল শনিবার সকালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং আগামী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে সিলেট সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন সিইসি নাসির। গত জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বলে আসছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া হলে তা হবে গণঅভ্যুত্থানে লড়াই করা জনগণের ‘আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধাচরণ’। আর বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নির্বাচন কমিশন সংস্কারের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে আসছে। সিইসি বলেন, একটা বিষয়ে আমি ক্ল্যারিফাই করার খুব প্রয়োজন মনে করছি। পত্রপত্রিকায় দেখছি, একদিনে সব লোকাল গভর্নমেন্টের নির্বাচন করার সুপারিশ কেউ কেউ করছে। বিষয়টি আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি- এটা কোনোমতেই সম্ভব নয়; এটা বাস্তবায়নযোগ্য কোনো পরামর্শ নয়।
দেখেন- স্থানীয় সরকার নির্বাচন মানে কী, পাঁচটা স্তরের নির্বাচন। সিটি কর্পোশেন, পৌরসভা, উপজেলা, জেলা, ইউনিয়ন পরিষদণ্ড পাঁচটা নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলতে এই পাঁচটা নির্বাচন আপনাকে করতে হবে। নাসির বলতে থাকেন, ‘আমাদের সিটি কর্পোরেশন হলো ১২টা, পৌরসভা হলো ৩৩০টা, জেলা হলো ৬১টি, তিনটা পার্বত্য জেলায় আমরা জেলা নির্বাচন করি না। আমাদের উপজেলা হচ্ছে ৪৯৫টা, আর আমাদের ইউনিয়ন পরিষদ হচ্ছে ৪ হাজার ৫৯৫টা। এসব নির্বাচন একদিনে করা- এটা আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য সুপারিশ নয়, এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়। ইসি এটাকে কোনো বাস্তবায়নযোগ্য কোনো পরামর্শ বলে মনে করে না। স্থানীয় সরকারের ভোটের দিনক্ষণ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, অনেকে আবার বলছেন যে- জাতীয় নির্বাচনের দিন একসাথে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা যেতে পারে; এইরকম পরামর্শ কেউ কেউ দিচ্ছে। এটা ইকুয়ালি নট ইমপ্লিমেন্টেবল; মেবি থিওরিটিক্যাল সাউন্ড, বাট প্র্যাক্টিকালি নট ইমপ্লিমেন্টেবল। আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই ইসির তরফ থেকে- একদিনে নির্বাচনের যে ধারণা, যে পরামর্শ আসছে, এটা বাস্তবায়নযোগ্য নয়, ইসির কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। এটা পরিষ্কার। আর স্থানীয় সরকার ইলেকশন কবে হবে, না হবে- এই ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য এখন করতে চাচ্ছি না। বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, ভোট কবে হবে তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে কতটা সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া হবে, তার ওপর। মোটাদাগে এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হতে পারে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন। সিইসি নাসির বলেন, আমি আগে একাধিকার বলেছি, ১৬ই ডিসেম্বরের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনের টাইমফ্রেম নিয়ে- সেটা মাথায় রেখেই ইসি কাজ করছে। আমরা আমাদের সেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ওনার বক্তব্য অনুযায়ী যাতে আমরা নির্বাচন করতে পারি, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ত্রয়োদশ নির্বাচন যে কেবলই ব্যালট পেপারের মাধ্যমে হবে তাও এদিন স্পষ্ট করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আগামী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে হবে না, এটা পরিষ্কার। আগামী জাতীয় নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে করার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। নির্বাচনি বিভিন্ন বিষয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে জানিয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন রিফর্মস কমিশন হয়েছে তো, আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার কমিশনের রিপোর্টটা এখনো আমরা পাইনি। এই রিপোর্টটা পেলে-তারা কী সুপারিশ দেয় তা পর্যালোচনা করে তাহলে আমরা হয়তো একটা সিদ্ধান্তে আসতে পারব। আমরা অপেক্ষা করছি তাদের রিপোর্টের জন্য। বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এজন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।’
এক সাংবাদিক সিইসির কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন, এবার প্রবাসীরা ভোটাধিকার পাবে কি না? উত্তরে নাসির বলেন, অবশ্যই পাবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি এবং সিরিয়াসলি কাজ করছি- যাতে আমাদের প্রবাসী ভাই-বোনদের এবার আমরা ইলেকশনের আওতায় আনতে পারি। উই আর সিরিয়াসলি ওয়ার্কিং অন ইট। তবে তাদের যদি ভোটের অধিকার দিতে হয়, তাহলে তো ভোটার হিসাবে শিডিউল ঘোষণার আগেই ভোটার করতে হবে। এদের অনেকেই অলরেডি ভোটার হয়ে আছেন, বাকিদেরও ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করার উদ্যোগ নিচ্ছি। এখন দেখেন, প্রথম বছর হয়তো হান্ড্রেড পার্সেন্ট প্রবাসীদের আমরা আনতে পারব না, বাট আমরা কাজটা শুরু করতে চাই।