বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, বাংলাদেশের মুদ্রার মান দেশীয়ভাবে নির্ধারিত হবে এবং কোনো অযৌক্তিক কারণে এক পয়সাও অবমূল্যায়নের সুযোগ নেই। সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে, নইলে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিতে পারে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা সীমাহীন, তবে তা নষ্ট করার সুযোগও সীমাহীন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গুগল পে’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর।
গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমাদের টাকা কখনোই যেন অমূল্যায়ন না হয়। দুবাই থেকে আমাদের টাকার মান নির্ণয় হবে না। এটা আগেও বলেছিলাম এখনও বলছি। সেখান থেকে ডলারের দর নির্ধারণ করবেন এটা মানা হবে না, এটা আমার কমিটমেন্ট ছিল। সেটা হতো দেইনি আমরা। তবে ফের যদি দেশে বিশৃঙ্খলা হয় তাহলে আবারও চলে আসবে ওই সময়, নষ্ট হয়ে যাবে সব। দুবাইয়ে বসে আবারও টাকার অবমূল্যায়ন হবে, বাজার নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে অন্যের হাতে।
গভর্নর আরও জানান, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই এখন প্রধান লক্ষ্য। এজন্য আগামী জানুয়ারি থেকে ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি (রিস্ক বেজড সুপারভিশন) কার্যক্রম শুরু হবে। এরইমধ্যে ২০টি ব্যাংকে সুপারভিশন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও কিছু সময় লাগবে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগ আসবে, বকেয়া পরিশোধ করেছি। দেশি-বিদেশিদের বিচরণ ক্ষেত্র হবে বাংলাদেশ। তবে ভুল উপস্থাপন করা যাবে না। বিদেশিরা টেকনোলজি আনেন, সাপোর্ট দেন তারা। আমাদের পোর্ট নিয়ে তথ্য ভুলভাবে উপস্থাপন হয়েছে। যদি বিদেশিরা আমাদের পোর্ট পরিচালনা করেন তাহলে আগামী ১০ বছর পরে আমরা তাদের টেকনোলজি শিখে অন্য দেশের পোর্ট পরিচালনা করতে পারবো।
আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য তিনি জানান, কয়েকটি ব্যাংক মার্জারের আওতায় আসবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। তিনি আমানতকারীদের আশ্বস্ত করে বলেন, আপনাদের স্বার্থ সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত থাকবে। যে ব্যাংকে আছেন, সেখানেই থাকুন।
গুগল পে চালু: দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়েছে গুগলের ডিজিটাল সেবা গুগল ওয়ালেট। এই সেবা সাধারণভাবে ‘গুগল পে’ নামে পরিচিত। গুগল, মাস্টারকার্ড ও ভিসার সহযোগিতায় সিটি ব্যাংক পিএলসি এই ডিজিটাল লেনদেন সেবা চালু করেছে। এখন থেকে সিটি ব্যাংকের গ্রাহকেরা তাদের মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ডটি গুগল ওয়ালেটে সংযুক্ত করে ‘গুগল পে’ ব্যবহার করে দ্রুত, নিরাপদ ও স্পর্শবিহীন পেমেন্ট করতে পারবেন।
গতকাল গুগল পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত (চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স) ট্র্যাসি এন জ্যাকবসন ও সিটি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মাসরুর আরেফিন, গুগল পেমেন্টসের গ্রুপ প্রোডাক্ট ম্যানেজার শাম্মী কুদ্দুস, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, ভিসা বাংলাদেশের প্রধান সাব্বির আহম্মেদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আর্থিক সেবা আরও ডিজিটাল করতে আমরা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। লেনদেন ডিজিটাল হলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়। এতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নিশ্চিতের পাশাপাশি নগদ অর্থ লেনদেনবিহীন সমাজ গড়ে ওঠে।’ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এই সেবার গ্রাহকেরা এখন থেকে দেশে কিংবা বিদেশে এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) সক্ষম—এমন পস টার্মিনালে শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোন স্পর্শ করেই সহজে ও ঝামেলাহীনভাবে লেনদেন করতে পারবেন। ‘গুগল পে’তে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নত এনক্রিপশন প্রযুক্তি; এটি গ্রাহকের তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এর মধ্য দিয়ে গ্রাহকের হাতে থাকা স্মার্টফোনই হয়ে উঠবে ডিজিটাল ওয়ালেট। ফলে গ্রাহককে আলাদা করে প্লাস্টিক কার্ড বহন করতে হবে না।
আকাশপথে যাতায়াত থেকে শুরু করে কেনাকাটা কিংবা সিনেমা—সব লেনদেন মুঠোফোনে হবে। মাসরুর আরেফিন বলেন, ‘প্রকৃত অর্থেই ডিজিটালি আর্থিক লেনদেন করতে পারে-এমন দেশের তালিকায় যুক্ত হলাম আমরা। এখন মানিব্যাগ থেকে কার্ড সরিয়ে গুগল পে চালুর সময় এসেছে। যার মাধ্যমে শুধু দেশে নয়, সারা পৃথিবীতে লেনদেন করা যাবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে গেল; আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তা বড় ভূমিকা রাখবে। সিটি ব্যাংকের এমডি আরও বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়ছে। আর্থিক খাত শক্তিশালী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাঁচ ব্যাংক একীভূত করে শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে।’