বিদেশে মার্কিন সহায়তা স্থগিত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের প্রভাব অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। দেশটির অর্থায়নে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ বা স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মীদের হোম অফিস করার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সহায়তায় পরিমাণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবদান সর্বোচ্চ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্য দেশটি ৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করেছে। কিন্তু আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে প্রাধান্য দেয়া ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় যাওয়ার প্রথম দিনেই প্রায় সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন। শুধু ইসরায়েল ও মিশরকে এর বাইরে রাখা হয়েছে।
আপাতত তিন মাসের জন্য এই স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে বিবিসি। সহায়তার আওতায় থাকা প্রকল্পগুলো বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না তা এই সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে দেখা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশকে প্রতিবছর দেয়া সহায়তার পরিমাণ ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। এর আগের বছরগুলোতে ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের মার্কিন সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৯০ মিলিয়ন ডলার। ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বা ইউএসএইড এর তথ্য বলছে, এই অর্থ যেসব খাতে ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, গণতন্ত্র ও শাসনব্যবস্থা, পরিবেশ ও জ্বালানি এবং মানবিক সহায়তা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের জরুরি সহায়তার জন্যও এতে বরাদ্দ ছিল।
তিন মাসের জন্য অন্যান্য সহায়তা প্রকল্পগুলো থমকে যাওয়া বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে? এতে কারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তা নিয়েও নানা ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে।
জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংকের মতো বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশে সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তবে দেশটির সহায়তার উল্লেখযোগ্য অংশ আসে ইউএসএইডের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইউএসএইডের পক্ষ থেকে প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে পুষ্টিকর খাদ্য প্রাপ্তির সুযোগ মেলে প্রকল্পের আওতাধীন প্রান্তিক মানুষের। এছাড়া জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়নেও সহায়তা করে তারা। দক্ষিণাঞ্চলে ২৩টি জেলায় এমন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছিল বলে সংস্থাটির ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। গণতন্ত্র মানবাধিকার ও শাসন : বাংলাদেশে সুশাসন ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধিতেও ইউএসএইডের বিভিন্ন প্রকল্প চলমান ছিল। সংস্থাটির মতে, সরকারের প্রতি নাগরিকদের আস্থা বাড়াতে এবং মানবাধিকার রক্ষায় সহায়ক এসব প্রকল্প। পরিবেশ ও জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করার কথা বলছে ইউএসএইড।