সম্প্রতি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ও খোলাবাজারে খাদ্যশস্য বিক্রির (ওএমএস) নতুন নীতিমালা জারি করেছে সরকার। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ ২০১৭ সালে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির নীতিমালা করেছিল। সেখানে সংসদ সদস্য উপজেলা খাদ্যবান্ধব কমিটির প্রধান উপদেষ্টা এবং উপজেলা চেয়ারম্যান উপদেষ্টা ছিলেন। নতুন নীতিমালা অনুযায়ী অনিয়মের জন্য ডিলারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে। আগের নীতিমালায় ওএমএস ডিলারদের অনিয়ম কিংবা শর্ত ভঙ্গের জন্য কোনো শাস্তির ব্যবস্থা ছিল না।
নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শর্ত লঙ্ঘন করলে বা দেশের প্রচলিত কোনো আইন অমান্য করলে, ডিলারশিপ বাতিল করা যাবে এবং অঙ্গীকারনামার শর্ত মোতাবেক তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করা যাবে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা দায়ের করা যাবে। ওএমএস ডিলার তার অনুকূলে বরাদ্দ করা খাদ্যশস্য কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যথাসময়ে উত্তোলন না করলে তার ডিলারশিপ বাতিল বা জামানত বাজেয়াপ্ত করা যাবে। ডিলার নিয়োগের সময় ডিলারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকার ফেরতযোগ্য জামানত পে-অর্ডার আকারে গ্রহণ করতে হবে।
আগের নীতিমালা অনুযায়ী, ২৫ হাজার টাকা জামানত নেয়া হতো। খাদ্যশস্য আত্মসাৎ বা মাস্টাররোল ও মজুদ রেজিস্টার থেকে বাড়তি কিংবা ঘাটতি হলে ওই পরিমাণ খাদ্যশস্যের অর্থনৈতিক মূল্যের দ্বিগুণ হারে আদায়যোগ্য হবে এবং ডিলারের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করা যাবে বলে নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ডিলার সময়মতো দোকান না খুললে বা ভোক্তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করলে কিংবা নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্ত বিক্রি করলে বা নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি করলে, ওজন/পরিমাণে কম দিলে, যথাযথ ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে টাঙানো না হলে এবং পরিদর্শন ও মজুদ রেজিস্টার, ডিও, বরাদ্দ আদেশ, চাল/আটার ভাউচার সংরক্ষণ না করাসহ বিবিধ অনিয়মের জন্য ডিলারের কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে।
ওএমএস কার্যক্রম চলাকালে ডিলার বা তার প্রতিনিধি নির্ধারিত ওএমএস কেন্দ্রে উপস্থিত না থাকলে ডিলারশিপ কার্যক্রম স্থগিত করা যাবে। কোনো ডিলার একনাগাড়ে ১৫ দিন খাদ্যশস্য উত্তোলনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। এছাড়া, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এই দুই কর্মসূচিতে ডিলার ও ভোক্তা বাছাই করবেন জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা।
আগের নীতিমালায় এ সব কমিটিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মনোনীত প্রতিনিধি রাখার বিধান ছিল। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এ সব কর্মসূচির সুবিধাভোগী হওয়ার উপযুক্ত না হলেও রাজনৈতিক বিবেচনায় কর্মসূচির সুবিধাভোগী হয়েছেন। যারা উপযুক্ত নন, কিন্তু এই কর্মসূচির সুবিধা পাচ্ছেন, বর্তমান সরকার তাদের বাদ দিয়ে নতুন করে নীতিমালা অনুযায়ী উপযুক্তদের অন্তর্ভুক্ত করবে। নতুন নীতিমালায় ডিলার নিয়োগ ও সুবিধাভোগী বাছাইয়ে রাজনৈতিক চাপ কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।