ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা

আবদুল্লাহ নুর
শ্রম ও শ্রমিকের মর্যাদা

ঘাম শুকানোর আগেই শ্রমিকের মজুরি দিয়ে দাও : ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে রাসুল (সা.)-এর অবদান অপরিসীম। পৃথিবীব্যাপী ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তিদূত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। রাসুল (সা.)-এর নির্দেশিত কর্মপন্থা ও দিগনির্দেশনা মানবজীবনকে করেছে উন্নত ও সমৃদ্ধ। মানবতা ও প্রকৃত সাম্যের শিক্ষা আছে রাসুল (সা.)-এর জীবনের বাঁকে বাঁকে। শ্রমিকের প্রতি মালিকের দায় ও কর্তব্য এবং মালিকের প্রতি শ্রমিকের আমানত রক্ষার বিষয়ে রাসুল (সা.) পথিকৃৎ। রাসুল (সা.)-এর আনীত চির শান্তি ও মহাসত্যের ধর্ম ইসলাম সমাজের সকল স্তরের মানুষের অধিকার ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছে। মালিক-শ্রমিক একজনকে অপরের ভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছে। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগেই মালিককে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন রাসুল (সা.)। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও’ (মিশকাতুল মাসাবিহ : ২৯৮৭)। শ্রমিকের বেতন আটকে রাখা, যথাসময়ে পরিশোধ না করে কষ্ট দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। মহানবী (সা.) শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় যে ঘোষণা দিয়েছেন- ‘তোমরা শ্রমিককে তার শরীরের ঘাম শুকানোর আগেই পারিশ্রমিক দিয়ে দাও’-এর চেয়ে উত্তম ও কার্যকর পদক্ষেপ ও ঘোষণা আর কী হতে পারে?

সহস্তে উপার্জন উত্তম উপার্জন : হাদিসে নিজ হাতে উপার্জিত সম্পদ সর্বোত্তম সম্পদ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। হজরত মিকদাদ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যা মানুষ নিজ হাতে উপার্জনের মাধ্যমে অর্জন করে এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই।’ এর পক্ষে বড় দলিল প্রত্যেক নবী-রাসুলের ভিন্ন ভিন্ন পেশা ছিল। নবীদের কেউ ব্যবসা করতেন। আবার কেউ গরু-মহিষ লালন-পালন করে দিনাতিপাত করতেন। নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। (বোখারি : ২০২৭) যেকোনো হালাল কাজ, হালাল পথে উপার্জন- চাই সেটা ছোট কাজ হোক বা বড় কাজ তা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়।

মালিক-শ্রমিক ভাই ভাই : ইসলামে জাতপাতের বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। ইসলাম সকল বৈষম্য দূর করে ইনসাফভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে কার্যকরী পথ দেখিয়েছে। মালিক-শ্রমিককে প্রভু-ভৃত্যের কাতারে না রেখে একে অপরের ভাইয়ের মর্যাদা দিয়েছে। ইসলাম মালিককে নির্দেশ দিয়েছে, সে যেন শ্রমিকের ওপর অনৈতিকভাবে কোনো কাজ চাপিয়ে না দেয়। হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। সুতরাং যার ভাইকে তার অধীন করেছেন, সে যেন তাকে তা-ই খাওয়ায়, যা সে খায়। সেই কাপড় পরিধান করায়, যা সে নিজে পরিধান করে। তাকে সামর্থ্যরে অধিক কোনো কাজের দায়িত্ব দেবে না। যদি এমনটা করতেই হয়, তাহলে সে যেন তাকে সাহায্য করে।’ (বোখারি : ৫৬১৭)।

মালিক-শ্রমিকের গুণাবলি : ইসলাম মালিক-শ্রমিক উভয়ের ওপরে কিছু নির্দিষ্ট দায়িত্ব প্রদান করেছে। শ্রমিকের দায়িত্ব হলো তার উপার্জিত সম্পদ হালালভাবে গ্রহণ করা। আর সম্পদ হালাল তখনই হবে, যখন আমানতদারি, ন্যায়পরায়ণতা ও কাজের পূর্ণ দক্ষতা নিয়ে সে কাজ করবে। কেননা, কেয়ামতের দিন প্রত্যেককে প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। আর তোমাদের প্রত্যেককে সে দায়িত্ব সম্পর্কে জবাব দিতে হবে।’ (বোখারি : ৭১৩৮) আর মালিকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকের প্রতি সর্বদা সহনশীল হওয়া। জুলুমণ্ডঅত্যাচার না করে তার ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি এসে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, কর্মচারীকে কতবার ক্ষমা করব? রাসুল (সা.) কোনো উত্তর না দিয়ে নীরব থাকলেন। তিনি আবারও জিজ্ঞেস করলে নবীজি (সা.) এবারও কোনো উত্তর দিলেন না। তৃতীয়বার জিজ্ঞেস করার পর উত্তরে বললেন, ‘প্রতিদিন ৭০ বার ক্ষমা করবে।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৫১৬৬)

শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ না করার শাস্তি : একজন শ্রমিকের দায়িত্ব হলো- তার নির্ধারিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা। আর মালিকের দায়িত্ব হলো শ্রমিকের মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ করা। মজুরি পরিশোধে কখনই গড়িমসি না করা। কেননা, যে সব মালিক তার অধীনে থাকা শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ না করে হাদিসে তাদের কঠিন হুমকি দেওয়া হয়েছে। হজরত রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির বিপক্ষে থাকব। তাদের একজন হলো- সেই ব্যক্তি, যে কাউকে শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পর তার থেকে কাজ বুঝে নিয়েছে, অথচ তার প্রাপ্য দেয়নি।’ (বোখারি : ২২২৭)।

লেখক : ইমাম ও খতিব, ভবানীপুর জামে মসজিদ, গাজীপুর সিটি

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত