কলম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে এর আগে তিনটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ফলাফল- তিনটিতেই পরাজয়। এর মধ্যে দুইটিই ছিল ইনিংস ব্যবধানে। দীর্ঘ ১৮ বছর পর আবার কলম্বোয় ফিরেই যেন সেই পুরোনো দুঃস্বপ্নে পা রাখছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে গড়ানোর আগেই আরও একটি ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কা এখন স্পষ্টতর। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ২৪৭ রানে। জবাবে শ্রীলঙ্কা তুলে নেয় ৪৫৮ রান, যা থেকে ২১১ রানে পিছিয়ে পড়ে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেও কাটতে পারেনি ব্যর্থতার ছায়া। ইনিংসের শেষভাগে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। দিনের শেষ বলে আউট হয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। অপরপ্রান্তে ১৩ রানে অপরাজিত আছেন লিটন দাস। এখনও শ্রীলঙ্কার থেকে ৯৬ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ রয়েছে ইনিংস হারের মুখো।
টেলএন্ডারদের নিয়ে লিটন কি পারবেন এই ব্যবধান ঘুচিয়ে প্রতিপক্ষকে একটি চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য উপহার দিতে? বাস্তবতা বলছে, এমন প্রত্যাশায় আশার বাতি জ্বালানোর মতো মানুষ এখন হাতে গোনা।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ২৪৭ রানের জবাবে দ্বিতীয় দিন শেষে ২ উইকেটে ২৯০ রান করেছিল শ্রীলংকা। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৩ রানে এগিয়ে ছিল লংকানরা। নিশাঙ্কা ১৪৬ রানে ও প্রবাথ জয়সুরিয়া ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। তৃতীয় দিন ব্যক্তিগত দেড়শ’ রান তুলে বাংলাদেশ স্পিনার তাইজুল ইসলামের শিকার হন নিশাঙ্কা। শর্ট কাভারে এনামুল হককে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১৯ চারে ২৫৪ বলে ১৫৮ রান করেন নিশাঙ্কা। নিশাঙ্কার পর শ্রীলংকার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ৭ রানে লেগ বিফোর আউট করেন তাইজুল। তাইজুলের জোড়া আঘাতের পর সিরিজে প্রথম উইকেটের দেখা পান পেসার নাহিদ রানা। নাইটওয়াচম্যান জয়সুরিয়াকে ১০ রানে বিদায় দেন তিনি। ৩৩৫ রানে পঞ্চম উইকেট পতনের পর জুটি বেঁধে শ্রীলংকাকে বড় সংগ্রহ এনে দেন কামিন্দু মেন্ডিস ও কুশল মেন্ডিস। তবে দুজনই শিকার হন স্পিনার নাইম হাসানের। আর্মবল ডেলিভারিতে কামিন্দুর স্টাম্প ভাঙ্গেন নাইম। ৪১ বলে ৩৩ রান করেন কামিন্দু। এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও এক প্রান্তে রানের চাকা সচল রাখেন কুশল। তার ৮ চার ও ২ ছক্কা সাজানো ৮৭ বলে ৮৪ রানের সুবাদে ৪৫৮ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। এতে ২১১ রানের লিড পায় লংকানরা।
বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সফল বোলার তাইজুল। টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৭তম বারের মত ইনিংসে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট নিয়েছেন তিনি। এছাড়াও নাইম ৩ ও রানা ১ উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার সাদমান ইসলাম ও বিজয়। ৬ ওভারে ৩০ রান তুলে ফেলেন তারা। কিন্তু আসিথা ফার্নান্দোর করা সপ্তম ওভারের পঞ্চম বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট লেগে ক্যাচ দেন ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ রান করা বিজয়। বড় ইনিংস খেলতে পারেননি আরেক ওপেনার সাদমানও। ১২ রান করে প্রবাথ জয়সুরিয়ার বলে ক্যাচ আউট হন তিনি। ৩১ রানের মধ্যে দুই ওপেনার ফেরার পর জুটি বাঁধেন মোমিনুল হক ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু মোমিনুল ও শান্তকে বড় ইনিংস খেলতে দেননি শ্রীলংকার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। মোমিনুল ১৫ ও শান্ত ১৯ রানে ডি সিলভার বলে আউট হন। ৭০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলের রান ১শতে নেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। দলীয় তিন অংকের ঘরে পৌঁছেই সজঘরে ফিরেন মুশফিক। জয়সুরিয়ার বলে বোল্ড হন ২৬ রান করা মুশফিক।
দিনের শেষটা ভালোভাবে শেষ করার দায়িত্ব ছিল লিটন ও মেহেদি হাসান মিরাজের। কিন্তু থারিন্দু রত্নায়েকের বলে লেগ বিফোর আউট হন ১১ রান করা মিরাজ। তার আউটের পর দিনের খেলা শেষ হয়। ১৩ রানে অপরাজিত আছেন লিটন। শ্রীলংকার জয়সুরিয়া ও ডি সিলভা ২টি করে উইকেট নেন।