রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে চরম অব্যবস্থাপনা ও সংকট দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ পানিই মিলছে না নগরবাসীর কাছে। অথচ, দীর্ঘদিন ধরে অনেক বাসায় পানির সংযোগই নেই, তারপরও নিয়মিত বিল ধরিয়ে দিচ্ছে রসিকের সংশ্লিষ্ট দপ্তর।
রসিকের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ৭টি ওভারহেড ট্যাংক থাকলেও চালু রয়েছে মাত্র ২টি, বাকিগুলো বছরের পর বছর বন্ধ। ৩টি পানি শোধনাগারের মধ্যে ২টি বন্ধ থাকায় বেশিরভাগ ওয়ার্ডে শোধন না করেই গভীর নলকূপের পানি সরাসরি সরবরাহ করা হচ্ছে।
সূত্রমতে, রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে মাত্র ১৫টি ওয়ার্ডে পানি সংযোগ রয়েছে, যেখানে ৪ হাজার ৮৪৮টি পরিবারের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন ৪০ হাজার ঘনমিটার পানি। তবে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ১২ হাজার ২৪০ ঘনমিটার।
নগরীর রবার্টসনগঞ্জ এলাকার পানি শোধনাগারটি নামমাত্র চালু, যা দিয়ে ৬টি ওয়ার্ডে শোধিত পানি দেওয়া হয়। বাকি ওয়ার্ডে সরাসরি নলকূপের পানি। নগরীর প্রধান শোধনাগার রাধাবল্লভ এলাকায় থাকলেও সেটি বছরের পর বছর বন্ধ পড়ে আছে। যন্ত্রাংশে মরিচা ধরেছে, ভবনটি তালাবদ্ধ, চারপাশে আবর্জনার স্তুপ।
বাহার কাচনা এলাকায় নতুন একটি অত্যাধুনিক পানি শোধনাগার নির্মাণ হলেও সেটিও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। কখন চালু হবে, তা জানাতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
শুধু ট্যাংক নয়, ৩৮টি গভীর নলকূপের মধ্যে ২২টি নষ্ট। ফলে পানির চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে রসিককে। বিদ্যুৎ চলে গেলে পানির সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গ্র্যান্ড হোটেল মোড়ের বিশাল পানির ট্যাংক ১৫ বছর ধরে অকেজো। একই অবস্থা গণেশপুর এলাকার ট্যাংকটিরও।
নগরীর নাজমুল ইসলাম জানান, তার বাসায় কোনো পানি সংযোগ নেই, তারপরও নিয়মিত মাসিক বিল পাঠাচ্ছে রসিক। একাধিকবার অভিযোগ করেও কাজ হয়নি।
নিউ আদর্শপাড়ার গৃহবধূ রোখসানা শিল্পী জানান, তার বাসায় পানির লাইন থাকলেও নিয়মিত পানি পাওয়া যায় না। কখনো টিপটিপ করে আসে, কখনো একেবারে বন্ধ। অভিযোগ করলে বলা হয়, মেশিন নষ্ট। অথচ মাসশেষে বিল ঠিকই আসে।
রসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা জানান, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিকল নলকূপগুলো মেরামতের কাজ চলছে। তবে, অনেকে নিজস্ব নলকূপ বসিয়ে পানির চাহিদা মেটানোর কারণে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না বলে দাবি করেন তিনি।