ফুলের শ্রদ্ধা আর দোয়ার মাধ্যমে মিরসরাই ট্র্যাজেডির ১৪ বছর পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে উপজেলার আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের উদ্যোগে দোয়া ও শোকসভার আয়োজন করা হয়। সকালে স্মৃতিস্তম্ভ আবেগ ও অন্তিমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেওয়া হয়। আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তারের সভাপতিত্বে শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোমাইয়া আক্তার। বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমীরণ বড়ুয়ার উপস্থাপনায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এস মোস্তফা আলম সরকার, আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রতন কুমার দাস, আবুতোরাব এসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত কুমার দাস।
শোকসভা শেষে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া মোনাজাত করা হয়। শোকসভায় আসা মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত এমরান হোসেন ইমনের পিতা আবুল কাশেম বলেন, আমার ছেলে তখন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সে প্রতিদিনের মতো ক্লাশ করার জন্য বিদ্যালয়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে খেলা দেখার জন্য বিদ্যালয়ের বন্ধুদের সঙ্গে মিরসরাই স্টেডিয়ামে যায়। ফেরার পথে পিকআপটি উল্টে ডোবায় পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। ওই সময় সরকার থেকে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা দিলেও পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এমন মৃত্যুতে সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিলেও মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে সরকারি ভাবে কোনো কিছু করা হয়নি। আমরা চাই বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়াবে। এ সময় উনার বক্তব্যের প্রতি একমত জানান শোকসভায় আসা নিহত রাজীব হোসেনের পিতা আনোয়ার হোসেন, সজল চন্দ্র দাশের ভাই দীপ চন্দ্র দাশ, লিটন দাশের বড় ভাই শ্যামল চন্দ্র দাশ, আমিন শরীফের মা হোসনে আরা।
স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ এবং ‘অন্তিম’ এ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিএনপি নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলমগীর, সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুজ্জামান, মুসা মিয়া চেয়ারম্যান, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কামাল উদ্দিন, উপজেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিন, মঘাদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শাহ মো. ফোরকান উদ্দিন প্রমুখ। এছাড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপজেলা জাসাস সভাপতি মেসকাত হোসেন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক কাউসার উদ্দিন প্রমুখ।
প্রসঙ্গত : ২০১১ সালের ১১ জুলাই মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল ফাইনাল খেলা শেষে ফেরার সময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী একটি পিকআপ বড়তাকিয়া-আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় পাশের একটি ডোবায় উল্টে ৪২ জন স্কুলছাত্রসহ ৪৫ জন নিহত হন। এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে পড়লে আঁতকে উঠেন নিহতদের স্বজনরা। এখনও যাওয়া-আসার পথে দুর্ঘটনাস্থলে থমকে দাঁড়ায় পথিক।