ঢাকা রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আলুর বাম্পার ফলন নিয়ে আশাবাদী কৃষক

আলুর বাম্পার ফলন নিয়ে আশাবাদী কৃষক

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ এখন সবুজ আলুর গাছে ছেয়ে গেছে। শীতের হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। উপজেলা কৃষি অফিসের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় প্রায় ১৭২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। মাটির গুণাগুণ আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আলুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে, যা বিগত কয়েক বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চান্দিনা উপজেলার মেহার গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন ও আলমগীর হোসেনের গল্পটি এখন ওই এলাকার অনেক চাষির প্রতিচ্ছবি। তারা জানান, তারা দুজনে ৫০ শতক জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। তার জমির আলুগাছগুলোর সতেজ ও গাঢ় সবুজ রঙ দেখে তিনি বেশ উচ্ছ্বসিত।

মোশারফ ও আলমগীর হোসেনের মতে, গাছের বর্তমান লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে এবার ফলন আশাতীত ভালো হবে। তবে এই সম্ভাবনার পেছনে রয়েছে হাড়ভাঙা খাটুনি আর মোটা অংকের পুঁজি বিনিয়োগের গল্প। আলু চাষ অন্য সব ফসলের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন এবং ব্যয়বহুল। বীজ, সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি মিলিয়ে এবার চাষিদের আগের তুলনায় অনেক বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। বিশেষ করে সারের আকাশচুম্বী দাম আর ভালো মানের বীজের দুষ্প্রাপ্যতা কৃষকদের পকেটে বড় ধরনের টান দিয়েছে। তবুও বুকভরা আশা নিয়ে তারা দিনরাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন এই প্রত্যাশায় যে, শেষ পর্যন্ত ফলন ভালো হলে এবং বাজারদর অনুকূলে থাকলে তারা লাভের মুখ দেখবেন।

আলু চাষে সফলতার প্রধান শর্ত হলো নিবিড় পরিচর্যা। উল্লেখিত কৃষক জানান, আলুর খেত চব্বিশ ঘণ্টা নজরে রাখতে হয়। সঠিক সময়ে সেচ দেওয়া, নিড়ানি দিয়ে মাটি আলগা করা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগে সামান্য অবহেলা করলে বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে কুয়াশার প্রকোপ বাড়লে আলুর জন্য এক মরণব্যাধি হয়ে দাঁড়ায় ‘পচা রোগ’ বা লেট ব্লাইট। কৃষকদের ভাষায় এটি আলুর মড়ক। আকাশ যদি মেঘলা থাকে এবং গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করে, তবে এই রোগের বিস্তার দ্রুত ঘটে। একবার যদি এই রোগ কোনো জমিতে হানা দেয়, তবে কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো মাঠের ফসল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। তাই বর্তমানে চান্দিনার কৃষকরা আলুর পচন রোধে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা এবং নিয়মিত তদারকিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, আলুর ফলন অনেকাংশেই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল।

যদি আগামী কয়েক সপ্তাহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকে এবং কনকনে শীতের সঙ্গে পর্যাপ্ত রোদ পাওয়া যায়, তবে চান্দিনাতে আলুর ফলন সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। মাঠের বর্তমান অবস্থা অত্যন্ত সন্তোষজনক হলেও কৃষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে আকস্মিক দুর্যোগের আশঙ্কা। অসময়ে বৃষ্টি বা অতি কুয়াশা চাষিদের সারা বছরের পরিশ্রম আর বিনিয়োগকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। তবুও মাঠজুড়ে সবুজের যে সমারোহ দেখা যাচ্ছে, তা আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছে কৃষকের চোখে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সার্বক্ষণিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তারা বিভিন্ন ব্লকে গিয়ে চাষিদের সঙ্গে কথা বলছেন এবং পচন রোধে করণীয় সম্পর্কে সচেতন করছেন। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের এই তৎপরতা কৃষকদের মনোবল বাড়িয়ে দিচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন- প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে এবার চান্দিনার আলুর বাম্পার ফলন শুধু স্থানীয় চাহিদা মেটাবে না, বরং দেশের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা এবং প্রকৃতির সুদৃষ্টির প্রতীক্ষা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত