ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

৬২০ ফিলিস্তিনি মুক্তি না পেলে আলোচনায় বসবে না হামাস

৬২০ ফিলিস্তিনি মুক্তি না পেলে আলোচনায় বসবে না হামাস

ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ইসরাইল যদি চুক্তি অনুযায়ী ৬২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি না দেয়, তবে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে তেলআবিবের সঙ্গে আর আলোচনায় যাবেন না তারা। গত রোববার হামাসের কর্মকর্তা মাহমুদ মারদাবি টেলিগ্রামে এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বৃহস্পতি ও শনিবার গাজা থেকে চার ইসরাইলির লাশ ফেরত এবং ছয় বন্দির মুক্তির পর ৬২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। কিন্তু, সর্বশেষ বন্দিবিনিময়ের সময় হামাসের আয়োজনকে অপমানজনক আখ্যা দিয়ে ওই ফিলিস্তিনিদের মুক্তি স্থগিত করেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

মাহমুদ মারদাবি বলেন, ইসরাইল যেন তাদের প্রতিশ্রুতি পালন করে এবং ৬২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়। তিনি ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য মধ্যস্থতাকারীদের প্রতি আহ্বান জানান। খবরে বলা হয়, মিসর এবং কাতার ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তারা যেন ওই ৬২০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়ে চুক্তির শর্ত পালন করেন। এ-বিষয়ে মধ্যস্থতায় সম্পৃক্ত এক মিসরীয় কর্মকর্তা এপিকে বলেছেন, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত মিসর অন্য কোনো বিষয়ে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা করবে না।

হামাস নেতা বাসেম নাঈম রোববার রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আগে ফিলিস্তিনি কারাবন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। তাহলেই শুধু গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনা করবে হামাস।’ হামাসের রাজনৈতিক শাখার এই সদস্য বলেন, ‘মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে শত্রুদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনার শর্ত হচ্ছে, আগে ৬২০ বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে, যাদের ৬ ইসরাইলি বন্দির মুক্তি এবং ৪ বন্দির লাশ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। ছয় বন্দি এবং চার লাশ শনিবার হস্তান্তর করা হলেও ইসরাইল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে বন্দিবিনিময় স্থগিত করেছে।’ বাসেম নাঈম জোর দিয়ে বলেন, চুক্তিতে যেসব শর্ত আছে, শত্রুরাও যেন তা মেনে চলে, তা মধ্যস্থতাকারীদেরও নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে, ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করার ইসরাইলি সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রোববার মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই পদক্ষেপ ইসরাইলি বন্দিদের প্রতি হামাসের অপমানজনক আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে নেয়া হয়েছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘হামাসের আচরণ এবং ইসরাইলি বন্দিদের অপমানের পর এই স্থগিতাদেশ একটি উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া।’ তিনি আরো বলেন, ‘হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন মনে করবে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাতে সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ বিশ্লেষকরা বলছেন, যেখানে আন্তর্জাতিক মহল বিভিন্নভাবে যুদ্ধের অবসান চাইছে, সেখানে হোয়াইট হাউসের এই সমর্থন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকে আরও তীব্র করে তুলবে। একদিকে পশ্চিমতীরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর লাগাতার অভিযান, অন্যদিকে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে নাটকীয়তার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যে-কোনো সময় আবার যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কার কথা বলেছেন অনেক বিশ্লেষক।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী রোববার বলেছেন, তিনি হামাসের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ শুরু করতে প্রস্তুত। এমন এক সময় এই বক্তব্য এলো, যখন হামাস বলছে, বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়া স্থগিত করার মাধ্যমে ইসরাইল গাজায় পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধবিরতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। নেতানিয়াহু রোববার এক সামরিক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে আমরা যে-কোনো মুহূর্তে আবার তীব্র লড়াইয়ে নামতে প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হামাসের অধিকাংশ নির্মূল করতে পেরেছি। এখন আলোচনার মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে হোক, আমরা যুদ্ধের লক্ষ্য পুরোপুরি অর্জন করব।’ নেতানিয়াহু এর আগে গাজাযুদ্ধে তার লক্ষ্যগুলোর কথা বারবার বলেছেন।

তার ভাষ্য, এই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য হলো- হামাসকে পরাজিত করে ২০২৩ সালের হামলায় বন্দি সব ইসরাইলিকে ফিরিয়ে আনা। ইসরাইলের রাজনৈতিক ও সামরিক বিশেষজ্ঞ কিংবা হামাসের বক্তব্য- ইসরাইল গাজাযুদ্ধের একটি লক্ষ্যও অর্জন করতে পারেনি। তারা হামাসকে পরাজিত করতে পারেনি; শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে চুক্তি করেই বন্দিদের ফেরত আনতে হচ্ছে। আগামীতে আবার যুদ্ধে গেলে ইসরাইল বিপর্যস্ত হবে বলে সতর্ক করেছেন ইসরাইলি বিশেষজ্ঞরা। হামাস বলেছে, তারাও যুদ্ধের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত।

নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে দেশটির বিরোধী দল। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ইয়াইর গোলান রোববার বলেছেন, নেতানিয়াহু চুক্তি লঙ্ঘন করে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি স্থগিত করেছেন এবং এর মাধ্যমে প্রথম ধাপের চুক্তিতে বিপর্যয় ঘটেছে। গোলান এক টুইট বার্তায় উল্লেখ করেন, ‘আমরা আগেই সতর্ক করেছিলাম, তিনি যুদ্ধবিরতি নস্যাৎ করতে চান; শেষ পর্যন্ত তা-ই করলেন।’ এই বিরোধী নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ভাইবোনদের জীবন হুমকিতে ফেললে বিরোধীদল প্রধানমন্ত্রীকে তার পদে থাকতে দেবে না।’ তিনি নেতানিয়াহুর উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি যদি চুক্তি ধ্বংস করো, তবে সবকিছু অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত