২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ১ বছরে রেল, নৌ ও সড়কপথের পাশাপাশি রেল-নৌ-বাস স্টেশন এবং ফুটপাতে নারীদের শ্লীলতাহানি-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ১৭৫৮টি এবং ধর্ষিত হয়েছেন ৪১ জন নারী। আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে কেন্দ্র করে সেভ দ্য রোড-এর উদ্যেগে গণপরিবহনে ৪০ শতাংশ নারী আসন ও নির্যাতন-ধর্ষণরোধে কঠোর শাস্তির দাবিতে প্রতিবেদন পাঠ-সমাবেশ ও র্যালি থেকে এই তথ্য দিয়েছেন সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা। গতকাল শুক্রবার বেলা সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিতে লিখিত প্রতিবেদনে তিনি আরও জানান, গত ১ বছরে রেলপথে ৫৬২ জন নির্যাতন, ১১ জন ধর্ষণ; সড়কপথে ৪১৩ জন নির্যাতন ও ২০ জন ধর্ষণ; নৌপথে ৩২৫ জন নির্যাতন ও ৫ জন ধর্ষণ এবং রেল-নৌ-বাস স্টেশন ও ফুটপাতে ৪৫৮ জন নির্যাতন ও ৫ জন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সেভ দ্য রোডের প্রতিষ্ঠাতা মোমিন মেহেদীর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সদস্য ওয়াজেদ রানা, কণ্ঠশিল্পী রিয়া খান, রিয়াদ ইসলাম, কাজী মুন্নী আলম, মেহেদী হাসান, মোনালিসা দেওয়ান অশ্রু প্রমুখ। এ সময় সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে নির্যাতন-নিপীড়ন-ধর্ষণরোধের পাশাপাশি সড়ক-রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনারোধে ৭ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়।
দাবিগুলো হলো : ১. প্রতি ৩ কিলোমিটারে পুলিশ বুথ বা ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি মিরসরাই ট্র্যাজেডিতে নিহতদের স্মরণে ১১ জুলাইকে ‘দুর্ঘটনামুক্ত পথ দিবস’ ঘোষণা করতে হবে। ২. সব সড়ক প্রশস্ত করার পাশাপাশি ফুটপাত দখলমুক্ত করে যাত্রীদের চলাচলের সুবিধা দিতে হবে। ৩. সড়কপথে ধর্ষণ-হয়রানি রোধে ফিটনেসবিহীন বাহন নিষিদ্ধ, ৪০ শতাংশ নারী আসন নিশ্চিত এবং কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ চালক-সহযোগী নিয়োগ ও হেলপারদের জাতীয় পরিচয়পত্র, গ্যারেন্টারসহ ডেটাবেজ করে তা সক্রিয় রাখতে হবে। ৪. সড়ক-নৌ-রেল ও আকাশপথ দুর্ঘটনায় নিহতদের কমপক্ষে ২০ লাখ ও আহতদের পরিবারকে ৫ লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা সরকারিভাবে দিতে হবে।
৫. ‘ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স রুল’ বাস্তবায়নের পাশাপাশি সত্যিকারের সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটেলিয়ন’ বাস্তবায়ন করতে হবে। ৬. সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত ও সাজা ত্বরান্বিত করার মধ্য দিয়ে সতর্কতা তৈরি করতে হবে এবং ট্রান্সপোর্ট পুলিশ ব্যাটেলিয়ন গঠনের আগ পর্যন্ত হাইওয়ে পুলিশ, নৌ-পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতাণ্ডসহমর্মিতাণ্ডসচেতনতার পাশাপাশি সব চালক-শ্রমিক ও যাত্রীদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব পরিবহন চালকের লাইসেন্স থাকতে হবে। ৭. ইউলুপ বাড়ানো, সড়ক-সেতুসহ সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব শান্তা ফারজানা লিখিত প্রতিবেদনে আরও জানান, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক নয়াদিগন্ত, দৈনিক দিনকাল, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক কালের কণ্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক কালবেলাসহ ১৭ টি জাতীয় দৈনিক, বাংলাভিশন, আরটিভি, জিটিভি, যমুনা নিউজ, মাছরাঙ্গা, এটিএন বাংলাসহ ২০ টিভি-চ্যানেল, বিবিসি বাংলা, জাগো নিউজ, বাংলা নিউজ, বিডিনিউজসহ ২২ টি নিউজ পোর্টাল এবং স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এবং সেভ দ্য রোডের স্বেচ্ছাসেবীদের দেওয়া তথ্যানুসারে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। শান্তা ফারজানা বলেন, ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত ১ বছরে রেল- নৌ ও সড়কপথে চরম নৈরাজ্য এবং আইন না মানার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। যা ক্রমশ নারীর নিরাপত্তাহীনতাকে উসকে দিয়ে শ্লীলতাহানি-নির্যাতন ও ধর্ষণবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই অবস্থায় সেভ দ্য রোডের পক্ষ থেকে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে সমাজ সচেতনতা, গবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডের গতি বাড়ানোর লক্ষ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রত্যাশা করছি।
সেভ দ্য রোড-এর মহাসচিব আরও বলেন, সড়ক-রেল ও নৌপথকে নারীবান্ধব এবং নিরাপদ করার লক্ষ্যে গত ১৮ বছর ধরে রাজপথে থাকা স্বেচ্ছাসেবী, গবেষণা ও সচেতনতামূলক সংগঠন সেভ দ্য রোড মনে করে- সড়কপথ, নৌপথ ও রেলপথের দুর্ঘটনামুক্ত পথ চলাচলের অধিকার রক্ষায় মালিক-শ্রমিক-প্রশাসনিক এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই। গত ১৮ বছর ধরে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করতে সেভ দ্য রোড ৭ দফা দাবি নিয়ে কাজ করছে। উল্লেখ্য, ‘সেভ দ্য রোড-এর অঙ্গীকার, পথ দুর্ঘটনা থাকবে না আর’ বাক্যটিকে লালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ২০০৭ সালে পথচলা শুরু করে আকাশ-সড়ক-রেল ও নৌপথ দুর্ঘটনামুক্ত করার জন্য নিবেদিত দেশের একমাত্র সচেতনতাণ্ডগবেষণা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেভ দ্য রোড।