রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার ঐতিহ্যবাহী ইফতারির বাজার হিসেবে পরিচিত হলেও গত কয়েক বছর ধরে বাজারের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। ক্রেতাদের অভিযোগ, দাম বেশি এবং মান খারাপ হওয়ায় কেনাকাটায় আগ্রহ হারাচ্ছেন তারা। ব্যবসায়ীরাও বলছেন, প্রত্যাশিত বিক্রি হচ্ছে না। এক্ষেত্রে নতুন বিক্রেতাদের অনভিজ্ঞতা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে দায়ী করছেন তারা। গতকাল শুক্রবার সরজমিনে দেখা গেছে, ছুটির দিন হলেও চিরচেনা ভিড় নেই চকবাজারে। উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতারা কম ইফতারসামগ্রী কিনছেন। ক্রেতাদের আকর্ষণ ‘বড় বাপের পোলায় খায় ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’, চিকেন সাসলিক, আস্ত কোয়েল, আস্ত খাসির রান ভুনা, সুতি কাবাব, শরবত-ই মোহাব্বত প্রভৃতির চড়া মূল্যের কারণে এসব পণ্যের বিক্রি কমেছে।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চকবাজারের অধিকাংশ মুখরোচক আইটেমই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও কিনতে পারছেন না অনেকেই। কালাম মিয়া নামের এক ক্রেতা আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ইফতারির কমন আইটেমগুলোর দাম অনেকটা বেশি। পরিবারের জন্য ইফতারি নিতে গেলে কমপক্ষে একদিনে হাজারের বেশি টাকা খরচ করতে হবে।
আরেক ক্রেতা জামিল হোসেন বলেন, চকবাজারের ইফতারির স্বাদ আগের মতো নেই। অনেক দূর থেকে মানুষ আসে মুখরোচক এসব খাবারের টানে। অথচ আগের সেই মান এখন আর নেই। এরপর আবার দাম বেশি। রামপুরা থেকে চকবাজারে ইফতার কিনতে আসা ষাটোর্ধ্ব ফয়সাল বিল্লাহ বলেন, প্রতিবছর এখানে আসি, কিন্তু খাবারের মান দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যে মশলা ব্যবহার হচ্ছে, এতে অসুস্থ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর মাঝে দামও অনেক বেশি। তাই আগের মতো কেনাকাটা করছি না। তবে বিক্রেতারা বলছেন, নতুন অনেক বিক্রেতা বাজারে প্রবেশ করায় পণ্যের গুণগত মান কমছে, যা ক্রেতাদের আস্থা হারানোর অন্যতম কারণ।
চকবাজারে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন মো. ফারুক। তিনি জানান, তিন পুরুষ ধরে এখানে ব্যবসা করছি। এটা মুঘল ঐতিহ্যের ইফতার। যদিও এখন অনেক সমালোচনা হচ্ছে। এর কারণ অনেক নতুন দোকানি এসেছেন যারা ইফতার সামগ্রীর মান ঠিক রাখতে পারে না। ফলে ক্রেতারা সন্তুষ্ট নয়, বিক্রিও কম। এরপরও অনেক পুরোনো ব্যবসায়ী আছেন যারা খাবারের মান কিন্তু ধরে রেখেছেন।
ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে মান ও দাম নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে বিক্রেতাদের। নাহলে আগামীতে চকবাজারের ইফতারির জনপ্রিয়তা কমতে পারে। দামে-মানে মিল না থাকায় জৌলুশ হারাচ্ছে চকবাজারের ইফতারি চকবাজার ঘুরে জানা গেছে, এ বছর বড় বাপের পোলাই খায় ঠোঙা ভইরা লইয়া যায় বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া চিকেন আচারি ১২০০ টাকা কেজি, হালিম ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি, সুতি কাবাব ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চকবাজারের আকর্ষণীয় ইফতারি আস্ত খাসির রান ভুনা ৮০০ টাকা পিস, আস্ত কোয়েল ৮০ থেকে ১০০ টাকা করে ও আস্ত মুরগি ভুনা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া শাহী ছোলা ৩২০ টাকা কেজি, ঘুগনি ১৬০ টাকা, কাশ্মীরি বিফ আচারী ১৫০ টাকা, প্রতি পিস অন্থন ১০ থেকে ২০ টাকা, জালি বিফ টিক্কা ৪০ টাকা, জালি টিক্কা ৩০ টাকা, দুধ নান ৬০ টাকা, আলু পরোটা ৩০ টাকা প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শাহী পরোটা ৭০ টাকা পিস, চিকেন সাসলিক ৫০ টাকা পিস, পনির ৮০০ টাকা কেজি ও শাহী জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দইবড়া ১৫০ টাকা কেজি, বাটার নান ১৫০ টাকা পিস, রেশমি কাবাব ১২০ টাকা পিস, ফালুদা ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাটি ও মুড়ি মানভেদে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পানীয়ের মধ্যে শরবত-ই মোহাব্বত প্রতি লিটার ২০০ টাকা, মাঠা ১০০ টাকা, শাহী মালাই শরবত ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং লাবাং ২২০ টাকা লিটার দরে বিক্রি করে দেখা গেছে।
শাহী পরোটা বিক্রেতা আব্দুল কাদের বলেন, শুক্রবার হিসেবে ক্রেতা কম। এই এলাকার হিজিবিজি অবস্থা। পাশাপাশি তীব্র যানজটের কারণে অনেকে আসতে চান না। একটা সময় অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত, এখন আসে না। প্রতিদিন ১০০ পিস পরোটা বিক্রির টার্গেট থাকে, দুপুরের পর থেকে ৩০টা পরোটা বিক্রি করেছি মাত্র।