ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বাংলাদেশে পুশইন নিয়ে ভারতের নতুন ষড়যন্ত্র

মেহেরপুর ও দিনাজপুর সীমান্তে নারীসহ ২৫ জনকে বিএসএফের পুশইন
বাংলাদেশে পুশইন নিয়ে ভারতের নতুন ষড়যন্ত্র

ভারতের আসাম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা আসামের আইনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন, এখন থেকে এ রাজ্যে যাকেই বিদেশি হিসেবে শনাক্ত করা হবে তাকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে না। রাজ্যের ডিসিরাই এটি করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে ১৯৫০ সালের একটি আইন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছেন, সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যকে এই ক্ষমতা দিয়েছে।

ডিসিদের সিদ্ধান্ত ছাড়াও আসামের ফরেনার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে যাদের বিদেশি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাদেরও বাংলাদেশে পুশ ইন করা হবে। গত কয়েক সপ্তাহে ফরেনার ট্রাইব্যুনালের দেওয়া আদেশের পর প্রায় ৩৫০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে।

গত সোমবার রাজ্যের আইনসভায় আসামের মুখ্যমন্ত্রী ২০২৪ সালের অক্টোবরে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া একটি রায়ের বিষয়টি উত্থাপন করেন। যেখানে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ রায় দেন, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা আসামে এসেছেন তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন না। ওই সময় আদালত আরও রায় দেন, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পর যারা আসামে প্রবেশ করেছেন তাদের কোনোভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না। তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে হবে।

হিমান্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, আদালত রায় দেন ১৯৫০ সালের পুশ ইন আইনও বৈধ। অর্থাৎ ডিসিরা চাইলে যে কাউকে পুশ ইন করতে পারবেন। এজন্য আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হবে না। ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) নারী ও শিশুসহ ১২ জন বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক এদেশে পুশইন করেছে। আন্তজার্তিক সীমানা আইন বা নাগরিক হস্তান্তর পদ্ধতি লঙ্ঘন করে গত মঙ্গলবার ভোরে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার আনন্দবাস সীমান্ত দিয়ে গোপনে এই ১২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ।

মুজিবনগর সীমান্তের বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আনন্দবাস ক্যাম্পের সদস্যরা জানান, ভোর রাতে বিএসএফ পশ্চিমবঙ্গ চাপড়া সীমান্ত অতিক্রম করে এদেশের সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব বাংলাদেশিকে ঠেলে দেওয়া হয়। পরে খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

বিজিবি চুয়াডাঙ্গা- ৬ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল হাসান জানান, আটককৃতদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে ফেরত পাঠিয়েছে। অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলায়। আটককৃত লোকমান আক্তার জানান- তারা ১০ বছর আগে জীবিকার সন্ধানে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন। তখন বিএসএফকে টাকা দিয়ে তাদের ভারতে ঢুকতে হয়েছিল। তারা ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে গিয়ে দিনমজুর, হোটেল কর্মী ও কৃষিকাজে নিযুক্ত ছিলেন। সেখানে তাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে সম্পদ গড়ে বসবাস শুরু করেন। দুই সপ্তাহ আগে হরিয়ানার বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারতীয় পুলিশ তাদের খুঁজে খুঁজে আটক করে এবং পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বহরমপুরের একটি কারাগারে বন্দি করে রাখে। সেখান থেকেই পরে বিএসএফ তাদের সীমান্তে জড়ো করে। গতরাতে অস্ত্রের মুখে তাদেরকে বাংলাদেশে পুশইন করতে বাধ্য করে।

মুজিবনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বিজিবির পক্ষ থেকে ১২ জনকে আটক করে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আটককৃতদের যাঁচাই-বাঁছাই চলছে। পরে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই নিয়ে গত ৩০ দিনে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে প্রায় ১০০ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ।

দিনাজপুর : দিনাজপুর সীমান্ত দিয়ে আবারও ১৩ জনকে পুশ ইন করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। গতকালভোরে জেলার বিরল উপজেলার এনায়েতপুর বিওপির সীমান্তে এই পুশ ইনের ঘটনা ঘটে।

পুশ ইনের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে দুইজন পুরুষ, দুইজন নারী ও ৯ জন শিশু। তাদের আটক করে ক্যাম্পে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বিজিবি জানায়, ভোরে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় তাদের আটক করে বিজিবির টহল দল। পরে তাদের ক্যাম্পে নেওয়া হয়। তাদের নাম ও পরিচয় যাচাই–বাছাই করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ভারতের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের পুশ ইনের ঘটনা বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দিনাজপুর সীমান্তেও এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আমরা সতর্কভাবে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছি এবং স্থানীয় বাসিন্দারাও সহযোগিতা করছেন। আটককৃত ব্যক্তিদের নাগরিকত্বের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে তাদেরকে স্থানীয় থানায় সোপর্দ করা হবে। এই সীমান্ত দিয়ে এর আগেও ৫৭ জনকে পুশ ইন করে বিএসএফ।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত