ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

শেষ হলো ইলিশ শিকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা

শেষ হলো ইলিশ শিকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা

ইলিশের প্রজনন ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে হয়েছে গতকাল বুধবার মধ্যরাতে। ইতোমধ্যেই সমুদ্রযাত্রার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন উপকূলের জেলেরা। দীর্ঘ দুই মাস পরে আজ আবারও সমুদ্রে মাছ ধরতে নামছেন উপকূলীয় জেলেরা। পটুয়াখালীর আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রজুড়ে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। ট্রলার পরিষ্কার, জাল সেলাই, ইঞ্জিন মেরামত, বরফ ও খাদ্য মজুতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন হাজারো জেলে। এককথায় সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তারা। জানা গেছে, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের টেকসই উৎপাদন নিশ্চিত করতে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছিল সরকার। তবে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সময়ের অসামঞ্জস্যতা এবং জেলেদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার সময় পরিবর্তন করে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন নির্ধারণ করা হয়। এই সময়ে সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকায় মাছ ধরা, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। আইন ভঙ্গকারীদের জেল ও জরিমানাও দেওয়া হয়েছে। জেলেসহ মৎস্য সংশ্লিষ্টদের আশা এবার সমুদ্রে ধরা পড়বে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় অনেক প্রকৃত জেলে সরকারি প্রণোদনার চাল পাননি বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া যারা পেয়েছেন তাদের প্রণোদনা বাড়ানোর দাবি। আলীপুর বন্দরের জেলে ইউনূস মিয়া বলেন, ‘আমি ২৩ বছর ধরে সমুদ্রে যাই। কিন্তু এখনও সরকারি প্রণোদনার তালিকায় আমার নাম নেই। বরং দেখেছি, যারা জেলে নয় তারাও চাল পেয়েছে। আমরা চাই, প্রকৃত জেলেদের তালিকাভুক্ত করা হোক।’ জেলে কাদের পহলান বলেন, ‘৫৮ দিন ধরে ধারদেনা করে চলেছি। সরকার যে চাল দিয়েছে, তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব হয়নি। এখন সমুদ্রে নেমেও যদি ইলিশ না পাই, তাহলে বিপদ আরও বাড়বে।’ মহিপুর মৎস্য আড়ৎদার মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা মিয়া বলেন, ‘ জেলেরা সঠিকভাবে সরকারের নিষেধাজ্ঞা পালন করেছে। আশা করছি, মাছের সরবরাহ বাড়বে। এতে বাজারে ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের দাম কিছুটা কমতে পারে। ব্যবসাও জমে উঠবে।’

কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য ছিল ইলিশের উৎপাদন ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা। আমরা সফলভাবে তা বাস্তবায়ন করেছি। জেলেরা সরাসরি এর সুফল পাবেন। প্রণোদনার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তার বিষয়েও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’ ভোলা : ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ বুধবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে সমুদ্রে মাছধরা শুরু করবেন উপকুলীয় জেলা ভোলা ও তৎসংলগ্ন জেলাগুলোর জেলেরা। গত ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) থেকে গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত মোট ৫৮ দিন দেশের সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছিলো সরকার। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, ভোলা জেলায় সমুদ্রগামী জেলের মোট সংখ্যা ৬৫ হাজার। এ সকল জেলেরা ১৫ এপ্রিল থেকে ৫৮ দিন সমুদ্রে মাছধরা থেকে বিরত ছিলেন। এ সময়ে সরকার তাদের জন্য মাথাপিছু ৭৮ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছেন। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবারের মতো এবারও এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তিনি আরও জানান, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলাকালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোষ্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের টাষ্কফোর্স সমুদ্রে তাদের টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

গতকাল বুধবার সকালে সরেজমিন ভোলার মেঘনাপাড়ের তুলাতুলি নামক এলাকায় জেলে পল্লীতে দেখা যায়, ৫৮ দিনের মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে যেতে জেলেরা সকল প্রস্তুতি শেষ করেছেন। তারা জাল, খাবার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নিয়ে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত