ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘মানুষের শরীরে ও মায়ের বুকের দুধে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে’

‘মানুষের শরীরে ও মায়ের বুকের দুধে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে’

বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৫ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে ‘প্লাস্টিক পলিথিন দূষণ প্রতিরোধ, বর্জ্যব্যবস্থাপনা ও ভূমিকম্প সুরক্ষা প্রস্তুতি’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং বাপার নির্বাহী সদস্য ও কোষাধ্যক্ষ জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাপা’র সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবির। সেমিনারে প্লাস্টিক ও পলিথিন প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ, শিল্প ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার এবং ভূমিকম্প ও প্রস্তুতি বিষয়ের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপা’র নগরায়ন ও নগর সুশাসনবিষয়ক প্রোগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, বাপা’র সহ-সভাপতি, অধ্যাপক ড. এম শহীদুল ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)’র আইনবিষয়ক সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট হাসানুল বান্না।

এতে উপস্থিত ছিলেন বাপা’র যুগ্ম-সম্পাদক, আমিনুর রসুল, হুমায়ুন কবির সুমন, ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, ড. হালিমদাদ খান, জাতীয় পরিষদ সদস্য হাজী শেখ আনছার আলী, আরিফুর রহমান, শাকিল কবির, তরিকুল ইসলাম রাতুলসহ আয়োজক সংগঠনের অন্য নেতারা, বিভিন্ন পরিবেশবাদী এবং সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি ও গ্রিন ভয়েস বিভিন্ন শাখার প্রতিনিধিরা। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আমাদের অভ্যাসের পরিবর্তন জরুরি। দেশে পরিবেশ আইন আছে কিন্তু এটাকে মানার প্রবণতা লক্ষণীয় নয়। দেশের বাজারগুলো পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যে সয়লাব হয়ে গেছে। এর ফলে মাছের পেটে, মানুষের শরীরে ও মায়ের বুকের দুধে প্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। এ থেকে বের হয়ে আসতে হলে সর্বস্তরে সচেতনতা প্রয়োজন এর পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার বলে মনে করেন। স্বাগত বক্তব্যে আলমগীর কবির বলেন, উন্নয়নের নামে বিগত সরকার ঢাকা শহরের গাছ, মাঠ-পার্ক, জলাধার এবং খাল-বিল ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০২ ইং সালে পলিথিন উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু পলিথিন ও টিস্যু ব্যাগ বাজার ছেয়ে যাচ্ছে। আইনের নির্মাণ ও কঠোর ব্যবহারের অভাবই এর প্রধান কারণ বলে তিনি মনে করেন। অধ্যাপক ড. এম ফিরোজ আহমেদ, তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন প্লাস্টিক মূলত তৈরি হয় পেট্রোলিয়ম থেকে। সুতরাং পরিবেশের ওপর এর একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যায়। এছাড়া প্লাস্টিক পলিথিনের মান উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কেমিকেল ব্যবহার করা হয় যেগুলোর প্রায় প্রতিটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হয়। ওয়ান টাইন প্লাস্টিক পরিবেশের ওপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিকের সঙ্গে জিডিপির একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। যে দেশের জিডিপি যত বেশি সেই দেশ তত বেশি পরিমাণ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন করে। উল্লেখ্য প্লাস্টিক বর্জ্য বিভিন্ন নদী অববাহিকা অতিক্রম করে সাগরে গিয়ে পড়ে। সূর্যের রশ্মি এবং অন্যান্য প্রক্রিয়ায় প্লাস্টিক ভেঙে মাইক্রো প্লাস্টিকে পরিণত হয় যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মানবদেহে মাইক্রো প্লাস্টিক প্রবেশের পর এটি দেহকোষে প্রবেশ করে কোষের ক্ষতি সাধন করে। বর্তমানে বিশ্বে মাইক্রো প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ বছরে প্রায় ০.৮৫ মিলিয়ন টন। তিনি আরও বলে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৯৭৭,০০০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন হয় যা বিভিন্ন মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে থাকে। প্লাস্টিক পলিথিন বন্ধে বাংলাদেশে আইন রয়েছে। পূর্বে হাতলযুক্ত পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে পরবর্তীতে হাতলবিহীন পলিথিনের প্রচলন শুরু হয়।

অধ্যাপক ড. আহমেদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, শিল্প এবং স্বাস্থ্য খাতে যেসব বর্জ্য উৎপন্ন হয় তার সিংহভাগই হচ্ছে প্লাস্টিকের। আমাদের জীবন বর্তমানে প্লাস্টিকময় হয়ে উঠেছে। শিল্পায়নের প্রয়োজন বিশ্বে সব দেশেই রয়েছে। তবে এই শিল্পায়ন বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। কারণ শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল ব্যবস্থাপনা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আমরা একদিকে যেমন দূষণের মধ্যে আছি, অন্যদিকে আমাদের পণ্যগুলোকে দূষণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলছি এবং এই মোড়কগুলোর ব্যবস্থাপনায় আমাদের যথেষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। বর্তমানে তৈরি পোষাক শিল্প এবং চামড়া শিল্প পানি দূষণের অন্যতম মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। চামড়া শিল্পের দূষণ থেকে বুড়িগঙ্গা নদীকে রক্ষা করার জন্য চামড়া কারখানা হাজারীবাগ থেকে ঢাকার সাভারে স্থানান্তর করার পর আরও ব্যাপকভাবে নদীদূষন শুরু হয়েছে। পরিকল্পনাবিদ তৌফিকুল আলম তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি বলে বাংলাদেশের শ্রীমঙ্গলে ১৯১৮ সালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে যার ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০২৫ সালে ৫৪টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে যার মাত্রা ৫-৬ এর মধ্যে এবং ২০২৫ সালে ৪০টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে যার মাত্রা ২-৪.৩ এর মধ্যে। ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এই ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশি। একটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে প্রায় ৭ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুৎ হবে এবং প্রায় ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিসাধন হবে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভবনই অননুমোদিত। একটি ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে ঢাকা শহরের প্রায় ৫১ শতাংশ ভবন ধ্বংসে পড়বে বলে তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাসে তিনি কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ উপস্থাপন করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত