দেশে ঊর্ধ্বগতি ভোজ্যতেলের বাজার। এ পরিস্থিতিতে দাম বেশি পাওয়ার আশায় সরিষা আবাদে ঝুঁকছেন নওগাঁর বরেন্দ্র জনপদের চাষিরা। যেখানে সরিষার ব্যাপক ফলনের হাতছানি দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। বর্তমান বাজারে সরিষা তেলের দাম প্রতিকেজি ২১০ টাকার ওপর। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ কম হয়েছে। এ সব জমিতে কৃষকরা আলুর আবাদ করেছে। সরিষার আবাদ কম হওয়ায় দাম ভাল পাওয়ার আশা কৃষকদের। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে- চলতি মৌসুমে জেলায় ৬০ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের বারি-৭ ও ১৪ এবং বিনা-৪ ও ৫ সরিষা চাষ করা হয়েছে। যা থেকে ৯৯ হাজার ৬৫ টন সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭৪৩ কোটি টাকার ওপর। জেলার বিভিন্ন মাঠে মাঠে দেখা মিলবে হলুদের সমারোহ। সরিষার ফুল যেন দিগন্ত রাঙিয়ে দিয়েছে জেলার টি উপজেলার মধ্যে ৯টি ফসলের মাঠ। যত দুর চোখ যায় যেন হলুদ ফুলের মাখামাখি। প্রকৃতি যেন সেজেছে অপরূপ সৌন্দর্যের নান্দনিক রূপে। কৃষকরা জানান, সরিষা আবাদে খরচ ও পরিশ্রম কম। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা আবাদে হালচাষ, শ্রমিক, পানি সেচ, সার ও কীটনাশকসহ আনুষঙ্গিক খরচ পড়ে ৫-৬ হাজার টাকা। যেখানে ফলন হয় ৬-৭ মণ।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা চাষিদের। বাজারে তেলের দাম বেশি, তাই এবার সরিষার ভালো দাম পাওয়ার আশা তাদের। এছাড়া একই জমিতে বোরো আবাদ করায় খরচও কম হয়। এতে লাভবান হবেন তারা। দাম কম পাওয়ায় ভোজ্যতেল হিসেবে অনেকে সয়াবিন খেতে অভ্যস্ত। তবে ভোজ্যতেলে সরিষা বাড়ানো গেলে চাহিদা পুরণ হবে তেমিন উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা। মান্দা উপজেলার কুরকুচি গ্রামের কৃষক শ্রীপদ কৃষক শ্রীপদ বলেন, গত বছর ৭ বিঘা জমিতে দেশীয় জাতের সরিষার আবাদ করেছিলাম। বিঘাতে ফলন হয়েছিল ৬ মণ করে। যেখানে সরিষা বিক্রি করে পেয়েছিলাম প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে লাভ হয়েছিল প্রায় ৮০ হাজার টাকা। তবে সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে বোরো আবাদ করায় পকেট থেকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়নি। পাশাপাশি ভোজ তেলের চাহিদাও পুরণ হয়েছে। এ বছরও একই পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। এ বছর সরিষার দাম আরো ভালো বিশেষ করে ৩ হাজার ৫০০ টাকা মণ বিক্রির আশা।
ভারশোঁ গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, দুই বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। তবে সরিষা ভোজ্যতেল হিসেবে তেমন একটা ব্যবহার না করে বিক্রি করে দেয়া হয়। দাম কম পাওয়ায় ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করা হয়। সরিষার চাষাবাদ বাড়ানোর পাশাপাশি এবং ভোজ্যতেলের ব্যবহার বাড়ানো দরকার। এতে সরিষার ভালো দাম পাওয়া যাবে এবং ভোজ্যতেল শরীরের জন্য উপকারে আসবে। নওগাঁ জিলানী অয়েল মিলের মালিক আব্দুল কাদের শাহ বলেন, নওগাঁ শহরের বিসিক শিল্প নগরীতে অবস্থিত কারখানা। এ কারখানায় প্রতিদিন প্রায় ১০ টন সরিষার তেল উৎপাদন হয়ে থাকে। তবে দেশে যে পরিমাণ সরিষার আবাদ হয় তা দিয়ে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয় না। চাহিদা পূরণে আমদানি করতে হয়। সরিষার আবাদ বাড়ানো গেলে আমদানি নির্ভরতা কমবে। সরিষার ভোজ্যতেলের ব্যবহারবিধি বাড়বে।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, শরীরের চাহিদা অনুযায়ী সরিষার ভোজ্যতেল অনেক উপকারি এবং পুষ্টিসম্মত। তবে মাঝের সময়ে সয়াবিন তেল বাজার দখলে রেখেছিল। বর্তমানে সরিষার ভোজ্যতেলের ব্যবহার বাড়ছে। এর ব্যবহার আরো বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োজন। সরিষা আবাদ বৃদ্ধি পেলে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ জন্য ভোজ্যতেলের চাহিদা পুরনে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাতে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে জেলায় এ বছর ৫৭ হাজার জন কৃষককে উন্নত জাতের ১ কেজি বীজ, ১০ কেজি ডিএপি এবং ১০ কেজি এমওপি সার প্রণোদনা দেয়া হয়। কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে।