ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নকলায় পাটের বাম্পার ফলন হলেও জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা

নকলায় পাটের বাম্পার ফলন হলেও জাগ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা

শেরপুরের নকলায় চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে পাটের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে পাটের বাজার মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরা পাট চাষের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন। নিবিড় পরিচর্যা আর কৃষি অফিস কর্তৃক চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও সার্বিক পরামর্শের কারণে এবার পাটের তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতায় ৯৯০ একর জমিতে কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে পাট চাষ করানো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তাছাড়া কৃষকরা ভালো দাম পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও আশা করছেন তারা।

উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা তাহমিনা ইয়াসমিন জানান, উপজেলার ৩০০০ কৃষককে পাট চাষের জন্য কৃষি প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। প্রতি কৃষককে এক কেজি করে বিজেআরআই-৮ তোষা পাটের বীজ এবং প্রতি জনকে ১২ কেজি করে বিভিন্ন রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। মাঠে পাটের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো বলে তিনি জানান। প্রাকৃতিক বড় কোনো সমস্যায় না পরলে কৃষকরা এবার লাভবান হবেন বলে আশাব্যক্ত করেন এ কর্মকর্তা।

সরেজমিনে উপজেলার মোছারচর, বানেশ্বরদী, বাছুরআলগা, নারায়নখোলা, পাঠাকাটা ও ভূরদীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাতাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে লিকলিকে সবুজ পাটগাছ। বর্ষার শুরুতে বৃষ্টিতে যৌবন পাওয়া সতেজতা ছড়িয়ে চোখের সামনে তুলে ধরেছে প্রাকৃতিক মুগ্ধতা। পাটের ফলন ভালো পেতে কৃষকদের পরিচর্যার অভাব নেই।

ঘুরতে ঘুরতে দেখা মেলে পাট ক্ষেতের সেবা করা অবস্থায় মোজার বাজার এলাকার আরিফ হোসেন ও বানেশ্বরদী গ্রামের মোশাররফ হোসেন বাবুসহ বেশ কয়েকজন পাট চাষির সঙ্গে। তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে দিন দিন পাটের আবাদ কমছে। বিশেষ করে পাটের বাজারে পাটের দরপতন, চাষিরা ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাট জাগ দেওয়ার পানির অভাবে কৃষকরা পাট চাষে আস্তে আস্তে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে তারা মনে করছেন।

ভূরদী খন্দকারপাড়া কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলহাজ্ব মো. ছায়েদুল হক জানান, বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, শ্রমিক মজুরি বেশি, জাগ দেওয়ার পানির অভাবসহ বিভিন্ন কারণে দিন দিন পাটের চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ কমছে। কোনো একসময় এদেশের উৎপাদিত পাট সোনালি আঁশ হিসেবে দেশ-বিদেশে খ্যাতি ছিল। বিভিন্ন কারণে আজ এই সোনালি আঁশের দুর্দিন চলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পাট উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একান্ত প্রচেষ্ঠায় আবারও এই সোনালি আঁশ পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।

অনেক কৃষক জানান, জ্যৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে, কিন্তু গত কয়েক বছরের মতো এবারও বৃষ্টি বাদলের সম্ভাবনা কম দেখা দেওয়ায় ও এলাকার বেশিরভাগ খাল, বিল শুকিয়ে যাওয়ায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। পানির অভাবে পাট পঁচানো নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা। পর্যাপ্ত পানি পাওয়া না গেলে পাটের গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন পাট চাষিরা।

অনেকে জানান বিভিন্ন সময়ে পাটের দরপতনের কারণে ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি ও পাট জাগ দেওয়ার পানির অভাবে কৃষকরা পাট চাষের প্রতি আস্তে আস্তে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ন্যায্যমূল্যের ব্যাপারে সরকারের সুনজর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তারা জানান, পাট চাষ করে জাগ দেওয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাই এখন পাট চাষ ছেড়ে দিয়ে শাকসবজিসহ অন্যান্য কৃষি আবাদের দিকে ঝুঁকছেন কৃষক। এছাড়া অপরিকল্পিত ভাবে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয় ভরাট করায় পাট জাগের জন্য পানির চরম সংকট দেখা দেয়। তাই অপরিকল্পিত ভাবে নদী-নালা, খাল-বিল ও ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করছেন পাট চাষিসহ অন্যান্য কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী জানান, এবছর উপজেলায় মোট ৫০৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে।

এরইমধ্যে তোষা জাতের পাট ৪২০ হেক্টরে, দেশি জাতের পাট ৪৫ হেক্টর, মেস্তা জাতের পাট ২২ হেক্টর ও কেনাফ পাট ২০ হেক্টর জমিতে চাষ করেছেন কৃষক। উপজেলার ৯নং চন্দ্রকোনা, ৮নং চরঅষ্টধর, ৭নং টালকী, ৬নং পাঠাকাটা ও ৫নং বানেশ্বরদী ইউনিয়নের কৃষকরা বরাবরের মতো এবারও পাটের আবাদ বেশি করেছেন। তবে পৌরসভা, ১নং গনপদ্দী, ২নং নকলা, ৩নং উরফা ও ৪নং গৌড়দ্বার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় পাট চাষের উপযুক্ত জমিতে বিভিন্ন জাতের পাট চাষ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। পাটের বাম্পার ফলন হওয়ায় নকলার কৃষকেরা এখন সোনালি আঁশের স্বপ্ন দেখছেন। আর কয়েকদিন পরেই সোনালি স্বপ্নের পাট কাটতে শুরু করবেন। অল্প ব্যায়ে স্বল্প শ্রমে কম সময়ে বেশি লাভের আশায় উপজেলার অনেক কৃষক ধানসহ অন্যান্য আবাদ ছেড়ে পাটের চাষে আগ্রহী হয়েছেন বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শাহরিয়ার মুনসালীন মেহেদী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত