ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আনন্দময় পাঠদানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

আনন্দময় পাঠদানের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে একদল শিক্ষার্থী বাদ্যের তালে তালে গাইছে গান, ঠিক পাশেই শিক্ষার্থীদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন একজন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের গেটে প্রবেশ করতেই কানে ভেসে আসছে ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো, উড়ে উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ’। বিদ্যালয়ে ব্যতিক্রম উদ্যোগ নেওয়া এই শিক্ষকের নাম আব্দুল মাজেদ। গান বাজনায় মুখরিত এক আনন্দময় বিদ্যালয়ে হয়ে উঠেছে এটি। উপজেলার ভোমরাদহ ইউনিয়নের ৫নং সেনুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মাজেদ। সংগীতে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও নিজ আগ্রহে ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখেন তিনি। শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগীতচর্চা, নাচ, অভিনয়সহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সহশিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে মাজেদের এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ বদলে দিয়েছে বিদ্যালয়টিকে।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে আব্দুল মাজেদ শিক্ষার্থীদের গণিত শেখাতেন। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে আরও আনন্দময় করার পথ খুঁজতে থাকেন তিনি। ২০১৫ সালে ইউটিউব থেকে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা শুরু করেন আব্দুল মাজেদ। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে ক্লাসের বিরতিতে শিক্ষার্থীদের সংগীত ও বাদ্যযন্ত্র শেখানোর প্রস্তাব দেন। সায় পেয়ে প্রথমে নিজের টাকায় বাদ্যযন্ত্র কিনে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগীত শেখানোর কাজ শুরু করেন।বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সাজানো-গোছানো বিদ্যালয়ের মাঠে শিক্ষার্থীরা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গাইছে। অন্যদিকে গানের তালে তালে নাচছে আরেকদল শিক্ষার্থী। আবদুল মাজেদ হাতবয়া বাজিয়ে তাদের সঙ্গ দিচ্ছেন। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সৌরভ শর্মা বলে, তৃতীয় শ্রেণি থেকে গান শিখছে সে। এখন অনেকগুলো গান গাইতে পারে। পাশাপাশি ইউকুলেলে, কাহন ও গিটারও বাজাতে পারে সে। শিক্ষক আবদুল মাজেদ বলেন, যেদিন সংগীতের ক্লাস চলে, সেদিন প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। এতে তিনি উৎসাহ পান, যা নজরে আসে প্রধান শিক্ষকেরও। বিদ্যালয়ভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন তিনি। যা দিয়ে কাহন, হাতবয়া, জিপসি ও গিটারের মতো বাদ্যযন্ত্র কেনা হয়। গান শেখানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অন্য সহশিক্ষা কার্যক্রমও। একসময় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি আশানুরূপ ছিল না। এখন উপস্থিতি শতভাগ বললেই চলে। ঝরে পড়ার হারও শূন্যের ঘরে। নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কারও নিয়ে আসছে শতবর্ষী এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত