ফুলকপি একটি শীতকালীন সবজি। এসময় প্রায় সবার ঘরেই প্রতিদিন ফুলকপির কোনো না কোনো পদ খাওয়া হয়। স্বাস্থ্যকর এই সবজি বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবে কাজ করে। ওজন কমানো থেকে শুরু করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। ফুলকপি হলো সরিষা পরিবারের সদস্য। ফুলকপিতে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি-৬, পটাসিয়াম, কোলিন ও ফোলেটসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ আছে। তবে ফুলকপি ডেকে আনতে পারে শারীরিক নানা সমস্যা। এর ফলে হজমের সমস্যা হতে পারে। ক্রুসিফেরাস সবজি হজম করা কঠিন, বিশেষ করে যখন আধা সেদ্ধ বা কাঁচা অবস্থায় খাওয়া হয়। গর্ভাবস্থায় ও বুকের দুধ খাওয়ান যেসব নারীরা, তারাও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফুলকপি খাবেন না। কারণ এ সবজি কিছু কিছু ওষুধে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, ভিটামিন কে রক্ত পাতলা করার ওষুধের সঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তাই আপনি যদি রক্ত পাতলা করা ওষুধ ব্যবহার করেন, তাহলে ফুলকপি খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ফুলকপি খেলে অনেকেরই অ্যালার্জি হয়। এটিও ফুলকপির একটি সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রোটিনযুক্ত সবজি ও ফলে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। মায়োক্লিনিকের তথ্যানুসারে, কিছু শাক-সবজি ও ফলে অ্যালার্জি-সৃষ্টিকারী প্রোটিনই মূলত এ ধরনের অ্যালার্জির জন্য দায়ী। এছাড়া ফুলকপি খাওয়ার পর অনেকেরই গন্ধযুক্ত ঢেঁকুর ওঠে। ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ডিসঅর্ডার বলছে, শুধু ফুলকপি নয়- মটরশুঁটি, গোটা শস্য, বাঁধাকপি, ব্রাসেলস স্প্রাউট, ব্রোকলি, অ্যাসপারাগাসসহ বিভিন্ন শাকসবজি খাওয়ার ফলে রাফিনোজ গ্যাস হতে পারে। ২০১৫ সালে ‘পুষ্টি ও ক্যান্সারে’ প্রকাশিত একটি মেটা-বিশ্লেষণের তথ্য অনুসারে, ক্রুসিফেরাসযুক্ত শাক-সবজি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। গবেষণায় আরো জানানো হয়, ক্রুসিফেরাস সবজি ও আয়োডিনের প্রাপ্যতার উপর থাইরয়েড ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়ে।
মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, দুগ্ধজাত দ্রব্য, শস্য-ভিত্তিক পণ্য যেমন সিরিয়াল-রুটি, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ফল ও শাকসবজিসহ বিভিন্ন খাবারে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায় আয়োডিন। এনআইএইচের তথ্য অনুসারে, থাইরয়েড হরমোন তৈরির জন্য শরীরের আয়োডিন প্রয়োজন। যা শরীরের বিপাক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থা ও শৈশবকালে সঠিক হাড়-মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যও আয়োডিন প্রয়োজন। এনআইএইচ নোট করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ মানুষ খাবার এবং পানীয় থেকে পর্যাপ্ত আয়োডিন পান। যেমন- ফুলকপিসহ গয়ট্রোজেনযুক্ত খাবার খাওয়ার বিষয়ে কেউ তেমন নিষেধ মানেন না। তবে নিয়ম অনুযায়ী ও নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া হলে ফুলকপি স্বাস্থ্যের জন্য হতে পারে অনেক উপকারী। সপ্তাহে একদিন বা দুই দিন অল্প পরিমাণে এটি খেতে পারেন। ফুলকপি বিভিন্ন উপায়ে খেতে পারেন। তবে আপনার যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে রান্না করে তবেই ফুলকপি খাবেন। তবে পানিতে সিদ্ধ করবেন না, এতে ফুলকপিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নষ্ট হয়ে যায়।