গরমকাল আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে পেটের সমস্যা। ডায়রিয়া, বদহজ্বম থেকে শুরু করে বমি বমি ভাব লেগেই আছে। প্রায় প্রতিটি ঘরেই পেটের অসুখে আক্রান্ত রোগীর দেখা মিলবে। কিন্তু কেন? এই সময়ে এই রোগের উপদ্রব কেন বাড়ছে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? বাঙালি যেমন ভোজ্বন রসিক, তেমনই পেটরোগাও বটে! অনুষ্ঠান বাড়িতে একটু বেশি খেয়ে ফেললে কিংবা তেল-মসলার পরিমাণ সামান্য বেশি হয়ে গেলেই পেটের গোলমাল শুরু হয়ে যায়। আর কথায় কথায় মুঠো মুঠো ওষুধ খাওয়ার বদভ্যাস তো আছেই। চিকিৎসকদের মতে, গ্যাস-অম্বলের সমস্যা আজ্বকাল ঘরে ঘরে। গরমে এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়। কিন্তু খুব বেশি ওষুধ নির্ভর হয়ে পড়া; কিন্তু মোটেই ভালো নয়। ঘন ঘন গ্যাস-অম্বলের ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস নানা ক্রনিক অসুখকে ডেকে আনে। তাই স্বাভাবিক উপায়ে হজ্বম ক্ষমতা বাড়ানো ও হজ্বম উপযোগী খাবার খাওয়াই প্রয়োজ্বন। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও কয়েকটি কৌশল মেনে চললেই হজ্বমের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজেই। গরমে বিভিন্ন কারণে পেটের সমস্যা বাড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি। অনেকেই রাস্তা-ঘাটে পানির তৃষ্ণা নিবারণ করতে খোলা শরবত খেয়ে থাকেন। যা পানি বাহিত রোগের কারণ হতে পারে। এছাড়াও অনেকেই পানি না ফুটিয়েই পান করেন। এজ্বন্যই পেটের নানা রোগ হয়।
গরমে ডিহাইড্রেশন, মসলাদার এবং আমিষ জাতীয় খাবারের অত্যধিক ব্যবহার, সেইসঙ্গে বাসি বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস হতে পারে এর নেপথ্যে সাধারণ কারণ। কারো কারো ক্ষেত্রে পেটের তাপের কারণে বদহজ্বম হতে পারে এবং গুরুতর ক্ষেত্রে পেপটিক আলসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। গরমে সুস্থ থাকতে করণীয়-
১. খাবার চিবিয়ে খান : কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা যেন বসে আয়েস করে খেতেই ভুলে গিয়েছি। সকালে অফিসে বের হওয়ার তাড়া, দুপুরে কাজের চাপ আর রাতে কত ক্ষণে খাওয়া শেষ করে ওয়েব সিরিজের শেষ ভাগটা দেখবেন- সেই চক্করে তাড়াহুড়া করে খাওয়ার অভ্যাস কমবেশি সকলেরই আছে। এই অভ্যাসের কারণেই; কিন্তু শুরু হয় পেটের নানা সমস্যা। খাবার চিবিয়ে না খেলে হজ্বম করতে অসুবিধা হয়। খাবার ভালো করে চিবোলে তাতে নানা উৎসেচক যোগ হয়ে তাকে সহজ্বপাচ্য করে তোলে। তাই ভালো করে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
২. খাওয়ার সময়ে খাবারের দিকেই মনোযোগ দিন : অনেকেই টিভি দেখতে দেখতে কিংবা মোবাইলে ফোনে কথা বলতে বলতে খাবার খান। এতে খাওয়ার প্রতি কোনও মনোযোগ থাকে না। এ কারণেও হজ্বমের সমস্যা দেখা যায়। খাওয়ার সময়ে খাবারের দিকেই নজ্বর দিন, খাবার উপভোগ করে খান। ৩. খাওয়ার সময়ে অতিরিক্ত পানি না খাওয়াই ভালো : অনেকেই খাওয়ার সময়ে প্রচুর পানি খেয়ে ফেলেন। এ কারণেও; কিন্তু গ্যাসের সমস্যা বাড়তে পারে। খাওয়ার সময়ে বেশি পানি খেয়ে নিলে হজ্বমে সাহায্যকারী উৎসেচকগুলোর কার্যকারীতা হ্রাস পায়। তাই খাবার ঠিক মতো হজ্বম হয় না। গ্যাস অম্বলের সমস্যা বাড়ে। তাই খাওয়ার সময়ে অল্প পানি খাওয়াই শ্রেয়।
৪. শরীরে পানির ঘাটতি না হয়, সে দিকে নজ্বর রাখুন : গরমের দিনে অনেকেই ডিহাইড্রেশনের সমস্যায় ভোগেন। আর শরীরে পানির ঘাটতি হলেই হজ্বমে অসুবিধা হয়। তাই সারাদিন দু’তিন লিটার পানি অবশ্যই খেতে হবে। খাদ্যতালিকায় ডিটক্স ওয়াটারও রাখতে পারেন।
৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন : একই সঙ্গে খাওয়া উচিত নয়, এমন বেশ কিছু খাবার আছে। যেমন মাংস খেয়েই দুধ বা দুগ্ধজাত কোনও খাবার, ভাতের পরেই ফল, ভাজাভুজি খেয়েই পানি— ভুলেও খাবেন না। এ সব পর পর না খেয়ে একটু সময় রাখুন মাঝে। প্রক্রিয়াজাত খাবার যতটা পারবেন এড়িয়ে চলুন। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ সব প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে হজ্বমের সমস্যার পাশাপাশি পরিপাকতন্ত্র তার কর্মক্ষমতা হারায়।