তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি (ঊচঙঈ)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় ২ হেক্টর জমিতে বারি সরিষা-১৭ এর আবাদ করা হয়েছে। এতে ব্যাপক ফলন পেয়েছে এখানকার কৃষকরা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, কুষ্টিয়ার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এ গবেষণা কার্যক্রম বারি সরিষা-১৭ চাষে কৃষকদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার জাগিয়েছে। বারি সরিষা-১৭ এর আবাদকৃত ফলন দেখাতে সরেজমিন কৃষকদের মাঠ দিবসের আয়োজন করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, কুষ্টিয়া। গত ৪ জানুযারি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৮০ জন কৃষক-কৃষানিকে নিয়ে এ মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। উক্ত মাঠ দিবসে ইপোক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকসহ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। উক্ত মাঠ দিবসে কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, বারি সরিষা-১৭ একটি উচ্চ ফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি জাত, যা মাত্র ৮২-৮৬ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হয়ে যায়। এটি বারি সরিষা-১৪ এর তুলনায় ৫-১০ শতাংশ বেশি ফলন দেয় যা কৃষকদের জন্য লাভজনক হয়ে উঠেছে। স্বল্প সময়ে পরিপক্ব হওয়ার কারণে এটি বিভিন্ন শস্য বিন্যাসে সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব, যা কৃষিজমির সর্বোত্তম ব্যবহারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ জাতের বিস্তারের মাধ্যমে দেশের ভোজ্য তেলের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে, ফলে আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং কৃষকরাও অধিক লাভবান হবেন।
কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার বটতৈল গ্রামের কৃষানি নাছিমা আক্তার বলেন, ‘আমি এবারই প্রথমবারের মতো বারি সরিষা-১৭ চাষ করেছি। মাত্র তিন মাসের মধ্যে ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি, আর ফলনও বেশ ভালো। প্রতি বিঘায় ৬.৫-৭.৫ মণ সরিষা পেয়েছি, যা আগের জাতগুলোর তুলনায় বেশি হওয়ায় আমি খুশি আগামী সিজনে এই জাতের আবাদ আরও বাড়াব।’
একই উপজেলার আরেক কৃষক জামাত আলী বলেন, ‘এই জাতের গাছ শক্তিশালী, ফলে হেলে পড়ে না এবং তেল আহরণের পরিমাণও বেশি। আগের জাতগুলোর তুলনায় এই সরিষা চাষে পরিচর্যার ঝামেলাও কম। ফলন ভালো হওয়ায় খরচের তুলনায় লাভ বেশি হচ্ছে।
সরেজমিন গবেষণা বিভাগ কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. জাহান আল মাহমুদ জানান, ‘বারি সরিষা-১৭ এর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এটি শুধু কৃষকদের জন্যই নয়, দেশের তেল শিল্পের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই জাত আবাদের মাধ্যমে কৃষক তার পরিবারের সারা বছরের তেলের চাহিদা মেটাতে পাররে। সরকারি উদ্যোগ ও কৃষি গবেষকদের প্রচেষ্টায় বারি সরিষা-১৭ চাষ সম্প্রসারিত হলে ভোজ্য তেলের ঘাটতি কমবে, কৃষকরাও অধিক লাভবান হবেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ জাতের চাষ আরও বিস্তৃত হলে দেশের কৃষি খাত নতুন সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাবে।