জেলা সাংবাদিক ইউনিয়ন নওগাঁ প্রতিষ্ঠা লগ্নে প্রথম বনভোজন হয়েছে। বনভোজন নিয়ে সদস্যদের মাঝে ছিল ব্যাপক উদ্দিপনা। সবার সম্মতি ক্রমে স্থান নির্ধারণ করা হয় জেলার পত্নীতলা উপজেলার ‘দিবরদীঘি’। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বুধবার সকাল ৮টায় শহরের মুক্তির মোড় সংগঠনের সামনে থেকে সবাই বাসে চড়ে রওয়ানা হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই ৪০ আসনের বাস এসে উপস্থিত। তবে অনেক সদস্য তখনো উপস্থিত হয়নি। অবশেষে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ২৯ জন সদস্য নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা। আরো ১০ জন সদস্য নিজেদের মতো কেউ মোটরসাইকেল ও মাইক্রো নিয়ে আগেই গন্তব্যে চলে যায়। বাসে বিনোদনের জন্য এরই মধ্যে একটি সাউন্ড সিস্টেম ভাড়া করে নেয়া হয়েছে। তবে সকালের নাস্তার জন্য শহরের বালুডাঙ্গা একটি হোটেল থেকে নাস্তার প্যাকেট নেয়া হয়। গন্তব্যের মাঝপথে সকাল ১০টার দিকে মহাদেবপুর উপজেলার কালুশহর এলাকার রাস্তার পাশে আম বাগানে নাস্তা খাওয়ার বিরতি। নাস্তায় ছিল খিচুড়ি, ডিমভাজি, আলু ভর্তা ও ডাল। তবে স্বাদ ভাল হওয়ায় ভর্তার প্রশংসা সবাই করেছেন। নাস্তা শেষে আবারও রওয়ানা। বাসের মধ্যে বক্সে গানের তালে তালে নেচে নিবোদন দেয়ার চেষ্টা করছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল নয়ন ও নির্বাহী সদস্য রিফাত হোসাইন সবুজ। পরে গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগদেন যুগ্ম সম্পাদক আব্বাস আলী। এদিকে নাচের ভিডিও ধারণে ব্যতিব্যস্ত অন্যরা। এভাবে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম পর্যটন এলাকা ঐতিহাসিক ‘দিবর দিঘীতে’। সেখানে আধাঘণ্টার বিরতি বা চা চক্র।
দিবর দীঘি: বরেন্দ্র ভূমির জনপদ। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও উঁচুনিচু ভূমিরূপ যে কাউকে মুগ্ধ করবে। জেলার পত্নীতলা উপজেলা থেকে ১৬ কিলোমিটার পশ্চিমে সাপাহার-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই ঐতিহাসিক দিবর দীঘি অবস্থিত। আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে আঁকাবাঁকা গ্রামীণ পাঁকা সড়ক পেরিয়ে যেতে হবে দিবর দীঘিতে। যা দিবর বা ধীবর দীঘি নামে পরিচিত এই জলাশয়। গ্রামীণ পাঁকা সড়ক থেকে শাখা সড়ক প্রায় ৪০০ ফুট পেরিয়ে যেতে হবে এই জলাশয় বা দীঘিতে। সড়কের দুইপাশে রয়েছে দেবদারু গাছে। দীঘির পশ্চিম পাড়ে রয়েছে সান বাঁধানো ঘাট। ঘাটের ওপর টিনের ছাউনি। আর এ পশ্চিম পাড়ে রয়েছে কয়েকটি খাবারের দোকান ও হোটেল। দীঘির পাড়ে কয়েকশ’ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গাছের সমন্বয়ে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প। জলাশয়ের মাঝখানে রয়েছে একটি স্তম্ভ। এ স্তম্ভটি কাছ থেকে দেখার জন্য নৌকার ব্যবস্থা রয়েছে। সান বাঁধানো ঘাটের কাছেই বাঁধা থাকে নৌকা। একাদশ শতাব্দীর কৈবর্ত্য রাজা দিব্যক, তার ভ্রাতা রুদোক ও রুদোকের পুত্র প্রখ্যাত নৃপতি ভীমের কীর্তি হিসেবে পরিচিত। একটি অখণ্ড পাথর কেটে তৈরি এই স্তম্ভের নয়টি কোণ আছে। এর এক কোণ থেকে আরেক কোণের দূরত্ব ১২ ইঞ্চি। এই বিরট স্তম্ভের উপরিভাগে পর পর তিনটি বলয়াকারে স্ফীত রেখা আছে যা স্তম্ভের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এর শীর্ষদেশে আছে নান্দনিক কারুকার্য যা বাহ্যত মুকুটাকারে নির্মিত। পানির উপরে স্তম্ভের উচ্চতা প্রায় ১০ ফুট, পানির ভেতরে ১২ ফুট এবং মাটির নিচে আরো ৮-১০ ফুট গ্রোথিত আছে। স্যার বুকানন হ্যামিলটনের মতে, স্তম্ভের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩০ ফুট এবং স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের মতে ৩০ ফুট। এই জয়স্তম্ভটি হাজার বছরের বাংলা ও বাঙালির শৌর্য-বীর্যের প্রতীক হিসেবে কালের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আজও দণ্ডায়মান। গ্রানাইট পাথরে তৈরি এরকম প্রাচীন স্তম্ভ বাংলাদেশে আর কোথাও নেই।
জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের দুই বছর মেয়াদ কমিটি রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাধারণ সভার আয়োজন করা হয় দিবর জেলা পরিষদ ডাক বাংলোতে। অবশ্য দুইদিন আগে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল নয়নের নেতৃত্বে চারজন সদস্য ঘটনাস্থলে ডাক বাংলোতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া করেন। সংগঠনের প্রথম অধিবেশন দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয় আলোচনা সভা। বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভবনা নিয়ে আলোচনা হয় দুপুর আড়াই টা পর্যন্ত। এরই মধ্যে শহরের সেই নজিপুর হোটেল ৫৬ কিলোমিটার দুর থেকে দুপুরে খাবার অটোরিকশা যোগে চলে আসে। আড়াইটার দিকে সবার মাঝে দুপুরের খাবার বিতরণ। মেনুতে ছিলো- ভাত, মাছ, ডিম, ডাল ও খাসির মাংস। এছাড়াও ছিল ঠান্ডা হিসেবে কোক। রান্না করার ঝামেলা এড়াতে একটি হোটেলের সঙ্গে খাবার সরবরাহে চুক্তি করা হয়। সকালে নাস্তা ও দুপুরের খাবার সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন আমাদের অর্থ সম্পাদক ইয়াসিন আহমেদ। তার প্রতি সবাই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশেই সাপাহার উপজেলা হওয়ায় আমাদের আমন্ত্রণে এসেছিলেন সিরিয়র সাংবাদিক তসলিম উদ্দিন, বাবুল আক্তার, প্রদীপ সাহা ও গোলাপ খন্দকার। বিকাল ৩টায় সংগঠনের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন নিয়ে আলোচনা। আলোচনা শেষে এ দিন সন্ধ্যায় নওগাঁ থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রথম সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক এসএম আজাদ হোসেন মুরাদ সভাপতি এবং দৈনিক বাংলা ও নিউজবাংলা ২৪ ডট কম এর নওগাঁ প্রতিনিধি রিফাত হোসাইন সবুজ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। এছাড়া কমিটির অন্যরা হলেন- সহ-সভাপতি পদে আশরাফুল ইসলাম নয়ন (বাংলা টিভি ও আজকালের খবর) ও সরদার উত্তাল মাহমুদ (এশিয়ান টিভি), যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আব্বাস আলী (এখন টিভি ও আলোকিত বাংলাদেশ) ও এনআর খোরশেদ আলম রাজু (রুপালী বাংলাদেশ), সাংগঠনিক সম্পাদক রুবেল হোসেন (স্বাধীন সংবাদ), দপ্তর সম্পাদক মাহবুব হাসান মারুফ (দৈনিক কাগজ), প্রচার সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন (ভোরের আকাশ), অর্থ সম্পাদক ইয়াসিন আহম্মেদ (দেশের কণ্ঠ), কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাড. শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন (আজকের বসুন্ধারা), আজাদুল ইসলাম আজাদ (ইত্তেফাক), আব্দুর রহমান রিজভী (সম্পাদক, প্রজন্মের আলো), মাজেদুর রহমান লিটন (স্বাধীন মত), তুহিন রেজা (অগ্রসর), রাকিব রায়হান (বাংলা ভিশন, ডিজিটাল) এবং আব্দুল মান্নান (সময়ের কণ্ঠস্বর ও তৃতীয় মাত্রা)। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন- অ্যাড. শহীদ হাসান সিদ্দিকী স্বপন এবং সদস্য এবিএম রফিকুল ইসলাম রফিক ও আজাদুল ইসলাম আজাদ। নির্বাচন শেষে ডাক বাংলো প্রাঙ্গণে সবাই মিলে গ্রুপ ছবি তোলা হয়। অবশেষে রাত ৯টায় নওগাঁ শহরে। এরপর যেযার মতো বাসায় ফেরা।