ঢাকা রোববার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সূর্যমুখীর ভালো ফলনে কৃষক খুশি

সূর্যমুখীর ভালো ফলনে কৃষক খুশি

জেলার সোনাগাজী উপজেলার উপকূলীয় চরাঞ্চলের পতিত জমিতে এবার সূর্যমুখী আবাদ করা হয়েছে। ভালো ফলনের আশায় কৃষকরা বেশ খুশি। চরের বিস্তীর্ণ জমিতে সবুজের মাঠে এখন হলুদের সমারোহ সবার নজর কাড়ছে। সূর্যমুখীর ফুলের সৌন্দর্যের প্রাণ জুড়াতে প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে দেখতে আসছে মানুষ। খেতের ধারে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ফেনীর সোনাগাজীতে ১৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ হয়েছে। জেলায় ৪৩০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ২২১ হেক্টর। এখন এ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের হাসি উপভোগ করছেন বিনোদন প্রেমীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, জেলায় এবার ৪৩০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে কৃষি বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের পরামর্শে ও স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহে জেলার এবার আবাদ হয়েছে ২২১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী। এর মধ্যে সোনাগাজীতে ১৩০ হেক্টর, ফেনী সদরে ৩০, ছাগলনাইয়ায় ১৫, ফুলগাজীতে ২০, দাগনভূঞায় ১১ ও পরশুরাম উপজেলায় ১২ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদের ইউনিয়নের সফরপুর গ্রামের কৃষক আবুল হাসান বলেন, ‘সূর্যমুখী আবাদ করতে জমিতে চারবার চাষ দিতে হয়। এরপর জমিতে প্রয়োজনীয় সার দিয়ে ১২ ইঞ্চি দূরত্বে বীজ বপন করতে হয়। দূরত্ব সঠিক হলে গাছ মজবুত হয়, ফলনও ভালো হয়। চারা গজানোর পরপরই ছত্রাক রোধে কীটনাশক ছিটাতে হয়। গাছের বয়স ২০-২৫ দিন হলে জমিতে সার ও সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি কৃষি বিভাগের পরামর্শে ও কৃষি প্রণোদনার মাধ্যমে বারি সূর্যমুখী ৩ জাতের আবাদ করেছি। এ জাতটি খাটো জাত। এটি বাতাসে ঢলে পড়বে না। ঝড়ে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। তিনি আরো বলেন, এবার ১ একর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছি। এতে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতি একরে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। উৎপাদিত সূর্যমুখী থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ভোজ্য তেল, খৈল ও জ্বালানি পাবো বলে প্রত্যাশা করছি।

ফেনী সদর উপজেলা লেমুয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা চারজন কৃষক একত্রিত হয়ে ‘এই এলাকায় ২ একর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আমাদেরকে বীজ ও সার দিয়েছে। তাই আমরা বেশি পরিমাণ জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করতে পেরেছি। স্থানীয় করিম মিয়া জানান, এবারের মতো এই এলাকাতে কখনো এত বেশি সূর্যমুখী ফুল আমরা দেখিনি। এবার আমাদের এলাকার আদর্শ কৃষক গোলাম রব্বানীসহ কয়েকজন একত্রিত হয়ে একসঙ্গে ২ একর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেছেন। সূর্যমুখী থেকে ভোজ্যতেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যাবে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত ভালো ভোজ্য তেল পেলে ভেজাল খাওয়া থেকে আমরা মুক্তি পাব। এছাড়া এখানে সবসময় গরু, মহিষের চারণভূমি ছিল। বর্তমানে এখানে সূর্যমুখী আবাদ করায় বিনোদনপ্রেমী মানুষের আনাগোনা বেড়েছে।’

স্থানীয় কৃষক গোলাম রব্বানীর সূর্যমুখী খেত আমাদের জন্য আদর্শ। তার জমিতে ভালো উৎপাদন হলে আমরাও আগামীতে সূর্যমুখী আবাদ করব। আমরা কয়েকদিন পরপরই সূর্যমুখী খেত দেখতে যাচ্ছি। চাষাবাদ পদ্ধতি বোঝার চেষ্টা করছি। সোনাগাজী উপজেলা শহর থেকে সপরিবারে সূর্যমুখী খেত দেখতে এসেছেন আবু আহম্মদ পাটোয়ারী। তিনি জানান, বন্ধুদের অনেকেই আমিরাবাদের সফরপুর এলাকায় সূর্যমুখী খেত দেখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তা দেখে আমি পরিবার নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। খেতের চারপাশ ঘুরে ভালো লেগেছে। তার মতে, সূর্যমুখী চাষ করলে একদিকে বিনোদনের ব্যবস্থা হয় অন্যদিকে ভোজ্য তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা রিমন আহমেদ বলেন, প্রতিদিন সূর্যমুখি ফুলের সুন্দর দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে।

এটা খুব ভালো লাগে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একরাম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। ভোজ্য তেল আমদানি ঘাটতি কমিয়ে আনতে চলতি মৌসুমে সরকার তেল জাতীয় ফসল আবাদে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। সেই আলোকে কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের পরামর্শে জেলায় এবার ২২১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া ও কাল বৈশাখী ঝড় কাটিয়ে উঠতে পারলে ফেনী জেলায় ভালো ফলন হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত