ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কিবরিয়া হত্যায় আ.লীগ বিএনপি নেতারা জড়িত

রেজা কিবরিয়া
কিবরিয়া হত্যায় আ.লীগ বিএনপি নেতারা জড়িত

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রয়াতের ছেলে ড. রেজা কিবরিয়া। গতকাল সোমবার হত্যাকাণ্ডের ২০ বছর উপলক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক ভিডিও বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ তোলেন এবং আওয়ামী লীগের চার ও এক বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ করেন। তারা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ ও শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, কিবরিয়া হত্যা মামলার বাদী ও সাবেক এমপি মো. আব্দুল মজিদ খান, হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য মুশফিক হুসেন চৌধুরী এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ। ‘বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার নাম উল্লেখ করে রেজা কিবরিয়া বলেন, সালমান এফ রহমান নিজের দুর্নীতি আড়াল করতে আমার বাবাকে হত্যা করিয়েছেন। আওয়ামী লীগের এই নেতারা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হয়নি। আমরা সেই বিচারের অপেক্ষায় থাকলাম। ভিডিওতে রেজা কিবরিয়া আরো বলেন, ৭৩ বছর বয়সী শাহ এএমএস কিবরিয়াকে শরীরে গ্রেনেডের ৪০০ স্প্লিন্টার বিদ্ধ অবস্থায় ভাঙা অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় এবং মাঝপথে তিনি মারা যান।

কিবরিয়ার পরিবার দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সুষ্ঠু তদন্তের অপেক্ষা করছে। আওয়ামী লীগের আমলে তা হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগের নেতারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ অভিযোগ মিথ্যা উল্লেখ করে জিকে গউছ বলেন, ‘আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিকভাবে আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য রেজা কিবরিয়াকে দিয়ে এ কথাগুলো বলানো হচ্ছে। এটি তার ব্যক্তিগত অভিমত। সঠিক তদন্ত হলেই বের হয়ে আসবে কিবরিয়া হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত। প্রসঙ্গত, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ২০০১ সালে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারে একটি জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন কিবরিয়া। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মঞ্জুরুল হুদা, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা আবদুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী নিহত হন। আহত হন আরও ৭০ জন। ঘটনার পরদিন হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়।

আদালত সূত্র জানায়, মামলা দুটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়। তদন্ত শেষে ২০০৫ সালে ১৮ মার্চ শহীদ জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল কাইউমসহ ১০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এ অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি আবেদন করে বাদীপক্ষ। পরে মামলার পুনঃতদন্তের পর ২০১১ সালের ২০ জুন আসামির সংখ্যা ১৬ বাড়িয়ে ২৬ জনের নামে দ্বিতীয় দফা অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এটি নিয়েও আপত্তি জানায় নিহত ব্যক্তির পরিবার। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এতে নতুন করে লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা ও খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ ৩৫ জনকে আসামি করা হয়। পরে ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। তবে দেড় যুগেও কিবরিয়া হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়নি। নিয়মিত সাক্ষী হাজির না হওয়া, বার বার সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানোর কারণে বিচারকাজ প্রলম্বিত হয়েছে, এমনটি বলেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত