পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয় এলাকায় ঢুকে পড়েছেন বিডিআর বিদ্রোহের আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। দুপুর ১টার পর পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সচিবালয়ের সামনে রাস্তায় কাফনের কাপড় পড়ে শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারকেই বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
এ সময় হাসনাত আব্দুল্লাহ বিডিআরের চাকরিচ্যুত সদস্যদের চাকরিতে পুনর্বহালসহ ছয় দফা দাবিতে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দিয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক বলেন, বিদেশি শক্তির সাহায্যে পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল খুনি শেখ হাসিনা। সরেজমিন দেখা গেছে, আন্দোলনকারী প্রথমে খাদ্য অধিদপ্তরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। এর পর সচিবালয় এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ জলকামান দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশি বাধা পেরিয়ে সচিবালয় এলাকায় ঢুকে পড়ে তারা। ছয় দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করছেন সাবেক বিডিআর সদস্যরা। এবার ছয় দফার সঙ্গে আরো দুই দফা যুক্ত করেছেন তারা। তাদের আট দফা দাবির হলো : ১. পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ২. এরই মধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া জেলবন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনের বিস্ফোরক মামলা বাতিল করতে হবে। ৩. গঠিত কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার জন্য প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত শব্দ এবং কার্যপরিধি ২-এর (ঙ) নং ধারা বাদ দিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাধীন তদন্ত প্রতিবেদন সাপেক্ষে অন্যায়ভাবে দণ্ডিত সব ধরনের নিরপরাধ বিডিআর সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে এবং পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঠিক কারণ উদঘাটন, মূল ষড়যন্ত্রকারী, হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৪. পিলখানা হত্যাকাণ্ডে নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে জেলের ভেতর মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করতে হবে। অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়ে থাকলে দায়ী সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ৫. পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনতে হবে। ৬. সব শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের লাশ পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে সঠিকভাবে শনাক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। ৭. স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারনকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনতে হবে। ৮. পিলখানার হত্যাকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করতে হবে এবং তাদের পরিবারের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।