ভাষা আন্দোলনের চেতনায় উজ্জীবিত এই বইমেলা কেবল বই কেনা-বেচার স্থান নয়, বরং এটি এক ঐতিহ্য, এক আবেগ। মাসব্যাপী একুশে বইমেলায় বরাবরের মতো এবারও প্রতিটি প্যাভিলিয়নের নিজস্বতা, নতুনত্ব এবং সৃজনশীলতা বইমেলার আবেদন আরো বাড়িয়ে তুলেছে। গতকাল বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি প্রকাশনীই পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নান্দনিক ও সৃজনশীল থিম নিয়ে হাজির হয়েছে। কোনো প্যাভিলিয়ন রঙিন আলোকসজ্জায়, কোনোটি ঐতিহ্যবাহী নকশায়, আবার কোনোটি প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে তরুণ ও কিশোর পাঠকদের আকৃষ্ট করতে থাকছে ভিন্নধর্মী এসব পরিবেশনা। বইমেলায় পাঠকদের কাছে অন্যতম পরিচিত প্রকাশনী ‘অন্যপ্রকাশ’। এ বছর এই প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে ভাষার জন্য এদেশের মানুষের ত্যাগের প্রতিচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। প্যাভিলিয়নের থিম রঙ রাখা হয়েছে কালো-সাদা, যেখানে রয়েছে কাঁটাতারের ব্যারিকেড। সেই ব্যারিকেড ভেঙে মুক্তি পাচ্ছে বর্ণমালা- যা ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও সংগ্রামের প্রতীক। একই সঙ্গে অন্য প্রকাশ মানেই যে লেখক হুমায়ূন আহমেদ তা ফুটে উঠেছে প্যাভিলিয়নের প্রতিটি খুঁটিতে। এ বিষয়ে ‘অন্যপ্রকাশ’-এর পরিচালক সিরাজুল কবির চৌধুরী বলেন, ‘একুশ মানে মাথা নত না করা, অন্যায়ের প্রতিবাদ। ভাষার জন্য যে সংগ্রাম, ত্যাগ ও আত্মদান- তা আমাদের প্যাভিলিয়নের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কালো শোক থেকে রক্তলাল শক্তির উত্থান, কাঁটাতারের ব্যারিকেড ভেঙে মুক্তি পেয়েছে বর্ণমালা। ভাষার জন্য বাঙালির সংগ্রাম ও সাফল্যের গৌরবগাঁথা প্রতীকী রূপ পেয়েছে ‘অন্যপ্রকাশ’-এর প্যাভিলিয়ন সজ্জায়।’ আফসার ব্রাদার্স প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন সেজেছে বিক্রমপুরের ঐতিহ্যবাহী চার চালা টিনের ঘরের আদলে। প্রকাশকের নিজস্ব বাড়ির অনুপ্রেরণায় নির্মিত এই প্যাভিলিয়ন গ্রামীণ ঐতিহ্যের আবহ ফুটিয়ে তুলেছে।
প্রকাশকের ছেলে জিহাদ হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছরই আমরা চেষ্টা করি নতুন কিছু আনতে। এবারের ডিজাইন সরাসরি বিক্রমপুর থেকে বানিয়ে আনা হয়েছে। এটি শহরের মানুষদের মনে গ্রামীণ ভাবনার সৃষ্টি করবে, কারণ অনেক পাঠকের শৈশব কেটেছে গ্রামে।’ এবারের বইমেলায় অনেক পাঠকের দৃষ্টি কেড়েছে ইতি প্রকাশনের ‘জিয়া বাড়ি’ প্যাভিলিয়ন। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শৈশবের বাড়ির আদলে এটি নির্মিত হয়েছে। বইমেলায় আগত দর্শনার্থীরা জানান, এ বছর মেলার পরিবেশ অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং পাঠকদের জন্য বই কেনার অভিজ্ঞতা আরো আনন্দময় হয়েছে। তরুণ পাঠকরা জানান, থিমভিত্তিক প্যাভিলিয়নগুলো শুধু নান্দনিকতাই নয়, বরং বই পড়ার আগ্রহও বাড়িয়ে তুলছে।
একজন দর্শনার্থী আমেনা বিনথি বলেন, ‘এবারের বইমেলায় অনেক বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন প্রকাশনী তাদের স্টল ও প্যাভিলিয়নে দারুণ সৃজনশীলতা দেখিয়েছে।’ আরেক দর্শনার্থী মাহিম হাসান বলেন, ‘একটা সুন্দর স্টলে দাঁড়িয়ে থেকে বই দেখতেও ভালো লাগে। তাছাড়া প্যাভিলিয়নগুলো দেখেও অনেকসময় বোঝা যায় এইখানে কিছু ভালো অরিজিনাল বই পাওয়া যাবে।’