৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল শনিবার। এতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন বিদেশিরা। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৯ দেশের ১ হাজার ৪৪৯ জন বিদেশি মেহমান ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক নিজামুদ্দিন অনুসারী তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আরব থেকে ৮৯ জন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ২৬৪ জন, পাকিস্তান থেকে ৪২৬ জন ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এছাড়া ৫১৭ জন ইংলিশ ভাষাভাষী এবং ছাত্র ও প্রবাসীসহ মোট ১ হাজার ৪৪৯ জন বিদেশি মেহমান ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন।
আগত বিদেশিদের সবচেয়ে বেশি রয়েছে ভারতের ৬৫৮। এরপর ইন্দোনেশিয়ার ২৬৭ জন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, আলজেরিয়া, বাহরাইন, ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, কানাডা, চায়না, ফিজি, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মায়ানমার, নাইজেরিয়া, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, সুদান, থাইল্যান্ড, তিউনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, উজবেকিস্তান, ইয়েমেন অন্যতম। এদিকে বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে ইজতেমা প্রশাসন। তাদের খিত্তাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। খিত্তার পাশে পুলিশ-র্যাবসহ সমস্ত বাহিনীর উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। তাদের থাকা, খাওয়া, যাওয়াত ও ভ্রমণের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান বলেন, বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে শনিবার বাদ ফজর বয়ান করেন মাওলানা ইলিয়াস বিন সাদ (দিল্লি নিজামউদ্দিন), তরজমা করেন মাওলানা ওসামা ইসলাম। সকাল সাড়ে ৯টায় তালিমের মওজু (ফজিলত ও আদব) মুফতি ইয়াকুব (নিজামুদ্দিন)। ১০টা থেকে খিত্তায় খিত্তায় তালিম হয়। জোহরের নামাজের পর বয়ান করেন আরব মেহমান, তরজমা করবেন মাওলানা মোস্তফা খলিল। আছরের পরে বয়ান করবেন হাফেজ মঞ্জুর (নিজামুদ্দিন), তরজমা করবেন মাওলানার রুহুল আমিন।
বিদেশি মেহমান : টঙ্গী তুরাগ নদের তীরে নিজামুদ্দিন মারকাযের মুরুব্বিদের তাৎপর্যপূর্ণ বয়ান, তাজবিহ-তাহলিল ও নফল ইবাদতের মধ্যদিয়ে চলছে বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম। এবারই প্রথম শবেবরাতে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হওয়ায় বাড়তি আবেগ বিরাজ করছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে। গত শুক্রবার রাতভর ময়দানে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে কাটান। এক আনন্দঘন ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বিরাজ করেছে ইজতেমার ময়দানজুড়ে।
বেশি ছাওয়াব হাসিলের আশায় ঢাকা থেকে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন মইনুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, মুজিবুর রহমানসহ একদল মুসল্লি। তারা জানালেন, ইজতেমার ইতিহাসে এবারই প্রথম পবিত্র শবেবরাতে ইজতেমা পালন করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। পুণ্যময় রজনীতে লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করতে পেরেছি। এতে মহান আল্লাহপাক রাজি-খুশি হবেন- ইনশাআল্লাহ।
গাজীপুরের শিমুলতলি এলাকা থেকে দুই ছেলে আব্দুল আলিম ও আবু মুসাকে নিয়ে শবেবরাতের নামাজ আদায় করতে ইজতেমা ময়দানে এসেছেন মোহাম্মদ আলাল উদ্দিন। তিনি জানালেন, ইতিহাসে এবারই প্রথম শবেবরাতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমা। দেশ বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি টঙ্গীর তুরাগ তীরে ইজতেমার ময়দানে একসাথে পবিত্র শবেবরাত পালন করেন।
আজ দুপুর দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমার আখেরি মোনাজাত। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার ডক্টর মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান এই তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার টঙ্গী ইজতেমা মাঠে জিএমপির পুলিশ কন্ট্রোল রুমের সামনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আখেরি মোনাজাতের অনুষ্ঠানের সময় উল্লেখ করেন। সাদপন্থিদের শীর্ষ মুরুব্বিদের বরাত দিয়ে পুলিশ কমিশনার আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠানের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাদপন্থিদের অন্যতম মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথা অনুযায়ী প্রতি পর্বে যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়ে থাকে। চলমান দ্বিতীয় পর্বে ৯টি যৌতুকবিহীন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নিয়ে এবারের ইজতেমায় ৯৫টি যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো।
বিষয়টি আলোকিত বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটির মিডিয়া সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম। বিয়ে পড়ান মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের মূল বয়ান মঞ্চে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনে আজ ৯ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়। এ নিয়ে প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে ৬৩ জোড়া ও দ্বিতীয় ধাপে ২৩ জোড়াসহ মোট ৮৬ জোড়া এবং দ্বিতীয় পর্বে ৯টিসহ এবারের ইজতেমায় মোট ৯৫টি যৌতুকবিহীন বিয়ে হলো। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী বর-কনের সম্মতিতে বর ও উভয় পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে যৌতুকবিহীন এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যৌতুকবিহীন বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহরে ফাতেমি’র নিয়মানুযায়ী। এতে মোহরানার পরিমাণ দেড়শ’ তোলা রুপা বা তার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নবদম্পতির সুখ-সমৃদ্ধি কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খুরমা-খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।