ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বন্ধ চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বেকায়দায় রোগীরা

বন্ধ চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট বেকায়দায় রোগীরা

টানা চতুর্থ দিনের মতো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। অচলাবস্থার কারণে চিকিৎসা নিতে আসা শত শত রোগী বেকায়দায় পড়েছেন। আবার ফিরে যেতে হচ্ছে বহু রোগীকে। গতকাল শনিবার হাসপাতালে গিয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, হাসপাতালে এখনও রয়েছে পিনপতন নীরবতা। বন্ধ রয়েছে হাসপাতালটির প্রধান দুটি গেট। ভেতরে কিছু পুলিশ সদস্য অলস বসে আছেন। সকাল থেকে অনেকেই হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসলেও তারা ফিরে যাচ্ছেন। চোখের সমস্যা নিয়ে আসা এক রোগী জানান, হাসপাতালে সেবা বন্ধ এটা না জেনেই এসেছেন।

টাকা কম থাকায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসি। তবে এভাবে চললে আমরা চিকিৎসা কীভাবে নেব। গত বুধবার নিরাপত্তার দাবিতে হাসপাতালটির চিকিৎসক নার্স কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি কর্মসূচিতে হামলা করে জুলাই গণআন্দোলনের আহত যোদ্ধারা। এতে চিকিৎসকসহ ১৫ স্টাফ আহত হন। আতঙ্কে হাসপাতাল ছাড়েন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে ৫০ জন জুলাই যোদ্ধা ভর্তি। আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। এছাড়া প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী ছিলেন, যারা নিরাপত্তার অভাবে হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। প্রসঙ্গত, হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজার রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি : জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাসেবা বন্ধ থাকার জন্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ‘চরম নিরাপত্তাহীনতাকে দায়ী করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। আহতদের প্রতি সম্মান রেখে সীমিত পর্যায়ে সেবাদান অব্যাহত থাকলেও সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এরইমধ্যে আলোচনায় বসেছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চলমান চিকিৎসা সেবাবিচ্ছিন্ন অবস্থার বিষয়ে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ২৯ মে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা হাসপাতাল অভ্যন্তরে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তারা বেশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে ওই দিন থেকেই হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২৯ মে যে ঘটনা ঘটে, তাতে চিকিৎসকসহ সব সেবাদানকারীরা আতঙ্কে রয়েছেন।

এতে আরও জানানো হয়, বর্তমানে হাসপাতালে শুধু জুলাই অভ্যুত্থানে আহতরা অবস্থান করছেন। তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে বিশেষ ব্যবস্থায় খাবার (পথ্য) সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে সারাদেশ থেকে আগত অন্যান্য চক্ষু রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এমন পরিস্থিতিতে মন্ত্রণালয় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছে। চলমান অচলাবস্থা নিরসনে এরইমধ্যে আহতদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল। তাদের উদ্দেশ্য হলো- স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দ্রুত চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক করা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা আলোচনার একটি ইতিবাচক ফলাফলের অপেক্ষায় আছি। চিকিৎসাসেবার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই হাসপাতালের সব সেবা পুনরায় চালু করা হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রোগীদের বিকল্প ব্যবস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, চক্ষু রোগীরা নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করবেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত