নিজেকে যুগ্ম সচিব আবার কখনো ব্যাংকের পরিচালক পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতারণা করে স্বর্ণালংকার নগদ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় প্রতারক আরাফাত রহমান সাহেব। তেমনি চাঁদপুর শহরের মহিলা কলেজ রোডের গোল্ডেন টাওয়ারে স্বর্ণ মহরা নামে জুয়েলারি দোকানে যুগ্ম সচিব পরিচয়ে ৪টি স্বর্ণের চেইন প্রতারণা করে পালিয়ে যায়। অবশেষে চাঁদপুর মডেল থানায় প্রতারণা মামলার পর ওসি বাহার মিয়ার নির্দেশে এসআই স্বপন নন্দী ও ডিবির ওসি মজিবুর রহমান সঙ্গী ফোর্স নিয়ে ঢাকায় উত্তরা অভিযান চালায়। এ সময় উত্তরা পশ্চিম থানার ১২ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের প্রিয়াংকা হাউজিং সোসাইটির ৯ নম্বর বাসা থেকে আসামি আরাফাত রহমান সাহেদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ তার বাসা তল্লাশি করে ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা নগদ বেশ কয়েকটি মোবাইল সেট আইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ডসহ মালামাল উদ্ধার করে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এই তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া। গ্রেপ্তার সাহেদ নোয়খালী জেলার সোনাইমুড়ী থানার ৭ নম্বর ইউনিয়নের বজরা গ্রামের মৃত মজিবুর রহমানের ছেলে। চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ জানায়, ব্যাংক ম্যানেজার মো. সাইফুল ইসলামের মোবাইলে প্রতারক সাহেদ তার নাম মো. জুলকার নয়ন এবং ব্যাংকের পরিচালক পরিচয় দেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের বিভিন্ন তথ্য জানতে চান। প্রতারকের মোবাইল নম্বর ও ছবির সঙ্গে ব্যাংকের পরিচালকের মিল পেয়ে তিনি তথ্য প্রদান করেন। পরবর্তীতে মামলার বাদী সাইফুল ইসলামকে প্রতারক সাহেদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলেন। সে আলোকে তিনি তার দেয়া মোবাইল নম্বরে ফোন দেন। ওই সময় প্রতারক সাহেদ বলেন- স্ব পরিবারে তিনি চাঁদপুরে এক বিয়েতে অংশগ্রহণ করবেন এবং তিনি মৎস্য গবষেণা ইনস্টিটিউটের রেস্ট হাউজে রয়েছেন। ম্যানেজারকে বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেন এবং বলেন অনুষ্ঠানে আসলে তাকে ডিসি এবং এসপির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিবেন। কিছুক্ষণ পরে প্রতারক সাহেদ আবার ম্যানেজার সাইফুলকে ফোন দিয়ে বলেন-আমার স্ত্রী কিছু স্বর্ণের গহনা কিনবে তার পরিচিত কোন জুয়ালারি দোকান আছে কি না। তিনি সরল মনে ব্যাংকের গ্রাহক মোজাম্মেল হক ও স্বর্ণ মহরার স্বত্তাধিকারী নাজির আহম্মেদ এর কাছ থেকে স্বর্ণ কেনার পরমার্শ দেন। এরপরই প্রতারক সাহেদ ওই দোকানে গিয়ে ৩ভরি ৯.৫ আনা ওজনের ৫টি স্বর্ণের চেইন ক্রয় করেন এবং টাকা পরিশোধ করার জন্য তার ক্রেডিট কার্ড প্রদান করেন। ওই দোকানে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা নেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় দোকানের কর্মচারীকে তার গাড়িতে করে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। ওই কর্মচারীকে সেখানে বসিয়ে রেখে কৌশলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান প্রতারক সাহেদ। এই ঘটনায় মামলা করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুর সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) স্বপন নন্দী তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার এবং সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে প্রতারক সাহেদকে রাজধানীর উত্তরা থেকে বুধবার (৮ জানুয়ারি) বিকালে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
রাতে তাকে চাঁদপুর সদর মডেল নিয়ে আসা হয়। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি বাহার মিয়া বলেন, ওই প্রতারক ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করার পর তার দেয়া তথ্যে মামলার আলামত হিসেবে ৬টি অ্যান্ড্রয়েড ফোন, নগদ ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা, ভিজিটিং কার্ড, ব্যাংকের স্ট্যাটমেন্ট ও স্বর্ণের খালি বক্স জব্দ করা হয়। প্রতারণা করে নেয়া স্বর্ণের চেইনগুলো সে বিক্রি করে দেয়। প্রতারক শাহেদ নিজেকে যুগ্ম সচিব আবার কখনো ব্যাংকের পরিচালক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে বিভিন্ন জেলা থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদপুর ছাড়াও অন্য জেলায় মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে এবং ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা এবং আসামিকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হবে।