ঢাকা ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কুল চাষে কম খরচে বেশি লাভ

কুল চাষে কম খরচে বেশি লাভ

বেথুলী গ্রামের একটি বাগানে সারি সারি কুল গাছ। গাছগুলো আকারে ছোটো। বড়জোর চার থেকে পাঁচ ফুট হবে। আপেলের রঙে ঝুলে থাকা কুলের ভারে ছোটো গাছগুলো প্রায় নুয়ে পড়েছে মাটিতে। যেকারণে বাঁশ দিয়ে কুলের ডালগুলো ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। কুল বাগানটিতে ঢুকতেই চোখে পড়ে একজন ব্যক্তির পাকা কুল তোলার দৃশ্য। তার এ কাজে সহায়তা করছিলেন আরো দুজন শ্রমিক। সবাই কুল তোলার কাজে ব্যস্ত। পূর্বের কলা চাষ ছেড়ে মাত্র ৪ বিঘা জমিতে ৭ বছর আগে পছন্দের ফল হিসেবে শখের বসে শুরু করেন কুল চাষ। কাশ্মীরী আপেল, বল সুন্দরী, ভারত সুন্দরী জাতের কুলের চারা সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করেন তিনি। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় একে একে বাড়তে থাকে কুল চাষে জমির পরিমাণ।

বর্তমানে এই চাষির ২৫ বিঘা জমিতে রয়েছে কুলের চাষ। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমে প্রায় ২২ লাখ টাকার কুল তিনি বিক্রিও করেছেন। গাছে এখনো যে ফল রয়েছে তাতে তিনি আশা করছেন ৩০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবেন। কুল চাষে সফল এই কৃষক বদলিয়েছেন নিজের ভাগ্য। হয়েছেন উপজেলার সেরা কুল চাষি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ বাড়ার সম্মুখভাগের সফল কুল চাষি গোলাম রহমানের সাফল্যের গল্পটা এরকমই। তিনি উপজেলার বেথুলী গ্রামের ওহাব মোল্লার ছেলে। কথা হয় কুল চাষি গোলাম রহমানের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, গত বছর আমি প্রায় ৩৭ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছিলাম। এ বছরও বাগানে ফলন ভালো হয়েছে। কেজি প্রতি ৬০-৭০ টাকা পাইকারি দামে দেশের বিভিন্ন বাজারের পাইকাররা আমার বাগান থেকে কুল কিনে নিয়ে যান। আগে আমি অন্য চাষ করতাম। কুল চাষে এসে দেখলাম, এটি খুব লাভজনক একটি চাষ। বিঘা প্রতি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কুল বিক্রি করা যায়। কৃষি অফিসের পরামর্শে কুল বাগানে আমি জৈব সার এবং জৈব বলাই নাশক ব্যবহার করি। আমার এ বাগানে প্রায় ২,৩০০ কুল গাছ রয়েছে। দৈনিক ৬০০ টাকা মজুরিতে ২০ জন শ্রমিকও এখানে কাজ করেন। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় ভবিষ্যতে কুল চাষ বাড়িয়ে ১০০ বিঘা পর্যন্ত করার ইচ্ছা রয়েছে আমার। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫৫০ জন কুল চাষি রয়েছেন। গতবছর উপজেলার ১১০ হেক্টর জমি কুল চাষের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ধরা হলেও কুল চাষ হয়েছিল ১০০ হেক্টর জমিতে।

আর এ পরিমাণ জমিতে ১,৮০০ টন কুল উৎপাদন হয়েছিল। চলতি বছরে পূর্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরে সম্ভাব্য ১,৯৮০ মেট্রিক টন কুল উৎপাদন হবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি অফিস। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাগর হোসেন জানান, কুল চাষে যে সহজে লাভের মুখ দেখা যায়, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলা সবচেয়ে বড় কুলচাষি গোলাম রহমান। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে পরামর্শ দিয়ে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছি।

তার সাফল্য দেখে অন্যান্য কৃষকদের মধ্যেও কুল চাষে আগ্রহের জন্ম হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, গোলাম রহমান একজন সফল কুল চাষি। উপজেলার অন্যান্য চাষিদের জন্য তিনি এখন উদহারণ। প্রতিবছর আমাদের এ উপজেলায় কুলচাষি বাড়ছে। কুল চাষে অল্প খরচে বেশি লাভ হয়। তাছাড়া কুল চাষ পতিত জমিতেও হয়। এ জন্য কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষে ঝুঁকছেন। আমরাও তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা প্রদান করছি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত