জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে নারী ফুটবল খেলা বন্ধে মাঠে ভাঙচুরের ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত গণশুনানি অনুষ্ঠানে অনুতপ্ত হয়ে অবশেষে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন জড়িতরা। তারা ভবিষ্যতে নারীদের ফুটবল খেলায় আর বাধা দিবেন না বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। নিছক ভুল বোঝাবুঝি থেকে এই অপ্রতীকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তারা। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দেবী চন্দ ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করার জন্য শনিবার আক্কেলপুরে আসেন। এ সময় উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত গণশুনানিতে তিলকপুরের স্থানীয় আলেম সমাজ, খেলার আয়োজক, স্থানীয় রাজনৈকি ব্যক্তি, গণমাধ্যমে কর্মী ও ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই অনুষ্ঠানে ভাঙচুরের ঘটনায় ভুল বোঝাবুঝি কারণে হয়েছে জানিয়ে অনুতপ্ত হয়ে অবশেষে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন তিলকপুর বাচ্চাহাজী ক্বওমী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিক।
প্রসঙ্গত ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিন্দা জ্ঞাপন করে বিবৃতি দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন। এদিকে ওই ঘটনা তদন্তের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত টিমের প্রধান উপসচিব দেবী চন্দ, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মনির হোসেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম, আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঞ্জুরুল আলম শনিবার বিকালে ঘটনাস্থল তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ পরিদর্শন করেন। গত শনিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ সভা কক্ষে গণশুনানিতে তিলকপুর বাচ্চাহাজী ক্বওমি মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক হাফেজ মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, নারীদের ফুটবল খেলার বিষয়ে আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটেছে।
আমরা নারী ফুটবলের বিরুদ্ধে নয় বরং অশ্লীলতার বিরুদ্ধে ছিলাম। যেখানে সরকার খেলাকে বৈধতা দিয়েছে, সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে আমরা আর কখনো যাব না। এ ঘটনায় আমরা অনুতপ্ত। আয়োজক তিলকপুর টি স্টার সেবা সংগঠনের সভাপতি সামিউল হাসান ইমন বলেন, নারী ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে খেলার মাঠে ভুল বোঝাবুঝি থেকে অপ্রীতিকর ঘটনাটি ঘটেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব দেবী চন্দ বলেন, মহিলা দলের ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। গণমাধ্যম কর্মীসহ স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে গণশুনানি করেছি।
যাদের মাধ্যমে এই ঘটনা ঘটেছে তারা দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং খেলার পক্ষে সকলেই মতপ্রকাশ করেছেন। গত বুধবার নারীদের ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল আক্কেলপুরের তিলকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে আসছিল। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের গত বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই খেলার আয়োজকরা মাইকে প্রচার শুরু করেন। প্রচার শুনে আগের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে স্থানীয় আলেম, কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও মুসল্লিরা মিলে খেলার মাঠের টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন।