ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নদী ভাঙনরোধে তিন প্রকল্পের প্রস্তাব

নদী ভাঙনরোধে তিন প্রকল্পের প্রস্তাব

চাঁপাইনবাবগঞ্জের মধ্যে বয়ে চলা পদ্মা, মহানন্দা ও পূনর্ভবা নদী। এ সব নদীতে প্রতিবছর ভাঙন সৃষ্টি হলে তীরবর্তী মানুষের ভিটামাটিসহ আবাদি জমি বিলীন হয়। নদী ভাঙনরোধে ৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সব প্রকল্প বাস্তবায়নে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। নদীগুলোর তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মিত হলে সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার পাশাপাশি স্থানীয়দের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বেশি ভাঙন কবলিত এলাকাগুলোয় অগ্রাধিকার দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন নদীর পাড়ের মানুষ। ভারতের গঙ্গা চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রবেশ করেছে পদ্মা নদী হয়ে।

আগ্রাসী পদ্মা নদী ভাঙনের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদ বাজার থেকে থেকে শিবগঞ্জের দুর্লভপুর ইউনিয়নের বোগলাউড়ি পর্যন্ত অঞ্চলটি। এখানকার নদী তীরবর্তী মানুষরা প্রতিবছর ভাঙনের শিকার। বর্ষাসহ শুষ্ক মৌসুমেও নদীভাঙন আতঙ্কে দিনপার হয় তাদের। ভিটামাটি, আবাদি জমি হারিয়ে অন্যের দুয়ারে অবস্থান নেয়া ভুক্তভোগীর সংখ্যা কম নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার পদ্মা নদীর তীর রক্ষা’ নামে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৬ কিলোমিটাজুড়ে বাঁধ ও প্রায় ৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চর অপসারণ করা হবে। ফলে নৌ-যোগাযোগ, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ভাঙনের হুমকিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, কৃষকের আবাদি জমি রক্ষাসহ মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ঘটবে। হিমালয় পর্বতে উৎপত্তি হওয়া মহানন্দা নদী মিলেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মার সঙ্গে। বর্ষাকালে এ নদীর প্রতিটি কোণা পানিতে ভরে যায়। ফলে সদর, শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটের এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়।

এতে করে এ নদীর তীরবর্তী মানুষ আবাদি জমি, ভিটামাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়। মহানন্দা নদী ভাঙনরোধে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ প্রকল্পের নাম ‘মহানন্দা নদীর ভাঙন থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা’। প্রল্পটিতে মহানন্দা নদী তীরে বাঁধ দেয়া হবে প্রায় ৩৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটার। এই কাজ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা-ধর্মী প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি রক্ষাসহ এলাকার ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থা উন্নতি হবে। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০০ কোটি টাকা। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উৎপত্তি হওয়া পূনর্ভবা নদীটি মহান্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। পদ্মা ও মহানন্দা নদীভাঙনের তুলনামূলক কম পূনর্ভবা নদীতে ভাঙন সৃষ্টি হয়। এখানে ভাঙন সৃষ্টির পরে মানুষের আবাদি জমি নদীগর্ভে যায়। ফলে আবাগযোগ্য জমি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে পড়ে গোমস্তাপুর উপজেলার মানুষ। পূনর্ভবা নদী ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্পের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রকল্পের নামটি দেয়া হয়েছে গোমস্তাপুর উপজেলার পূনর্ভবা নদীর ভাঙন থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা’। প্রকল্পটি বাস্তাবায়ন করতে লাগবে প্রায় ৪.১৫ কিলো মিটারের একটি বাঁধ। এই বাঁধ নির্মিত হলে ফসলাদি, মানুষের বাড়িঘর রক্ষাপাবে। একই সঙ্গে এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ৭০ কোটি টাকা। পদ্মার তীরবর্তী বাসিন্দা আবুল মুমিন বলেন, জেলায় ৩টি নদী আছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙন হয় পদ্মায়। বছরের পর বছর নদী ভাঙন হওয়ায় অনেকে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাই বলবো, বেশি ভাঙন কবলিত এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবছরই বর্ষা কিংবা শুষ্কমৌসুমে পদ্মা নদীর ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে করে নদীর তীরবর্তী মানুষের ভিটামাটি, আবাদিজমি হারায়। ভাঙনরোধ করতে পদ্মায় সর্বপ্রথম বাঁধ দেয়া জরুরি। তিনি আরও বলেন, মহানন্দা ও পূনর্ভবা নদীতেও ভাঙন সৃষ্টি হয়। কিন্তু পদ্মার চেয়ে অনেক কম। সেই তুলনায় পদ্মার তীর রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা থাকা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবীব বলেন, সম্প্রতি প্রস্তাবিত ৬টি উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে গণশুনানী অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পদ্মা নদীর তীর রক্ষা প্রকল্পটি বেশি গুরুত্ব পায়। আমরা এখন এই প্রকল্পটিকে আগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছি।

প্রকল্পটির বিষয়ে মন্ত্রণালয়েও কাগজপত্র দাখিল করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটির আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রায় ২৬ কিলোমিটাজুড়ে বাঁধ ও প্রায় ৪ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চর অপসারণ করা হবে। নদী ভাঙন রোধে আরও দুটি প্রকল্প আছে। পর্যায়ক্রমে এ সব প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে তীর রক্ষায় কাজ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত