১৭ বছর আগে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও এক অদ্ভুত কারণে মো. মোস্তাফিজুর রহমান তার স্বপ্নের ক্যাডার পদটি লাভ করতে পারেননি। হঠাৎ সরকারের সিদ্ধান্তে তার ফলাফল স্থগিত করা হয় এবং পুনরায় ভাইভা পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়, যা ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ। সেই সময়ের পর থেকে আইনি লড়াইয়ে নামেন মোস্তাফিজুর। মোস্তাফিজুর রহমানের সংগ্রাম কেবল তার ব্যক্তিগত সংগ্রাম নয়, বরং সব বঞ্চিতদের জন্য একটি শক্তিশালী বার্তা হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। ২০০৮ সালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ২৭তম বিসিএসের প্রথম মৌখিক পরীক্ষার ফল বাতিলের সিদ্ধান্তকে বৈধ ঘোষণা করলেও, পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আরেকটি বেঞ্চ দ্বিতীয় মৌখিক পরীক্ষা অবৈধ ঘোষণা করে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি আপিল করা হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে ২০২৫ সালে হাইকোর্টের আপিল বিভাগ ২৭তম বিসিএসের নিয়োগ বঞ্চিতদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দেয়। এই রায়ে এক হাজার একশ সাতত্রিশ জনকে চাকরি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমানও একজন।
গত বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেয়, যা বঞ্চিতদের জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষিত জয় বয়ে আনে। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আল্লাহর কাছে আমি সব সময়ই বিশ্বাস রেখেছিলাম, একদিন আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হবে। আমাদের এই দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের ফলস্বরূপ আজ আমরা জয়ী। আমি এখন খুবই খুশি এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। এক সময় তিনি বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, কিন্তু যখন তার ফল স্থগিত করা হয়, তখন তার মনোবল ভেঙে গিয়েছিল। তিনি বলেন, এটা ছিল আমার জীবনের শেষ বিসিএস, কিন্তু ১৭ বছর পর আজ যখন এ রায় এল, আমি বুঝতে পারলাম যে কোনো কিছু হারালে যদি সৎভাবে সংগ্রাম করা হয়, তবে একদিন তা ফেরত পাওয়া যায়। মোস্তাফিজুর রহমানের শিক্ষাগত জীবন ছিল তার ধারাবাহিক সংগ্রামের একটি অংশ। লক্ষ্মীপুর মান্দারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি, তেজগাঁও কলেজ থেকে মাস্টার্স এবং বিকম (অনার্স) সম্পন্ন করার পর, তিনি ২০০৪ সালে নোয়াখালীর এমএ হাসেম কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে প্রভাষক পদে যোগ দেন। শিক্ষকতা পেশায় তিনি নিজের জীবন সাজালেও, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নটি কখনও ত্যাগ করেননি।
তিনি আরও বলেন, আমরা আইনি লড়াই করেছি, আমরা কখনও হাল ছাড়িনি। আজ এই রায় আমাদের জন্য এক ধরনের রেহাই, এবং আমি খুবই কৃতজ্ঞ সেই সব আইনজীবী ও ব্যক্তির প্রতি, যারা আমাদের এই অধিকার ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন। এই রায়ের মাধ্যমে ২৭তম বিসিএস পরীক্ষার ফল স্থগিতের সিদ্ধান্ত বাতিল হয়ে, নিয়োগ বঞ্চিতদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। মোস্তাফিজুর রহমানের মতো অনেকের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমানের এই জয় শুধু তার নিজের জন্য নয়, বরং সব বিসিএস বঞ্চিতদের জন্য একটি প্রেরণার গল্প। তার বিশ্বাস, যারা সৎভাবে সংগ্রাম করেন, তাদের একদিন আল্লাহ নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন।