ভোলার লালমোহন অর্থনীতিতে বড় একটি অংশের যোগান দিচ্ছে ডাব। এ উপজেলা থেকে প্রতি মাসে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৩ কোটি টাকার ডাব পাঠানো হয়। গ্রাম-গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে অন্তত ৫০০ জন হকার এ সব ডাব সংগ্রহ করেন। হকাররা ডাব মালিকদের কাছ থেকে প্রতি পিস ৪৫-৫৫ টাকায় কিনেন। এর পর তারা আড়তদারদের কাছে ৬৫-৭০ টাকা মূল্যে প্রতি পিস ডাব বিক্রি করেন। আড়তদারই দেশের বিভিন্ন জেলায় এ সব ডাব সরবরাহ করেন। গত কয়েক বছর ধরে উপজেলার ডাবের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। প্রতি বছরের মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত বাজারে ডাবের চাহিদা বেশি থাকে।
লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের এমনই এক ডাব চাষি হাজী মো. বাদশাহ মিয়া বলেন, আমার বাগানে অন্তত ৭০০ ডাব গাছ রয়েছে। প্রতি বছর এ সব গাছ থেকে বেশ কয়েকবার ডাব বিক্রি করি। এতে করে বছরে অন্তত ৭-৮ লাখ টাকার ডাব বিক্রি হয়। বাগানে এসে গাছ থেকে হকাররা ডাব পেরে নিয়ে যান। তবে এর মধ্য থেকে প্রতি বছর সার এবং শ্রমিকসহ অন্যান্য খরচ বাবৎ অন্তত ২ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়। তবুও ডাব বিক্রি করে বছর শেষে আল্লাহর রহমতে যে টাকা আয় হয় তাতেই আমি খুশি। গত ৪ বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে মালিকদের কাছ থেকে ডাব কিনছেন মো. আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, আমার মতো অনেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এই ডাব কিনেন। ডাব কিনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়েই সবাই জীবিকা নির্বাহ করেন। আমি নিজে প্রতিদিন গড়ে ১০০ পিসের মতো ডাব কিনতে পারি। প্রতি পিস ডাব (আকার ভেদে) ৪৫-৫৫ টাকা করে ক্রয় করি। মাস শেষে অন্তত দেড় লাখ টাকার ডাব কেনা সম্ভব হয়। এর পর ওই ডাব আবার বাজারে নিয়ে আড়তে বিক্রি করি। সেখানে আমরা আকারভেদে ৬০-৭০ টাকা করে একেকটি ডাব বিক্রি করি। তবে পরিবহণসহ অন্যান্য খরচ বাদে মাসে এই ডাব কেনাবেচা করে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করতে পারি। এই আয়ের টাকায়ই আমার স্ত্রীসহ দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাই। লালমোহন ডাব ও নারিকেল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে ডাবের অনেক চাহিদা রয়েছে। আমাদের এই উপজেলার ১৮টি আড়তের আওতায় অন্তত ৫০০ হকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ডাব কিনে আনেন। তাদের থেকে আবার আমরা ওইসব ডাব কিনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাই। বছরের ৬ মাস বাজারে ডাবের চাহিদা বেশি থাকে। তবে গড়ে আমরা এই উপজেলা থেকে প্রতি মাসে দেশের বিভিন্নস্থানে অন্তত ৩ কোটি টাকার ডাব পাঠাতে পারি। এর মাধ্যমে লালমোহনের অর্থনীতি কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এই সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিটি হকারের বিপদে-আপদে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়। একই সঙ্গে এই সমিতির পক্ষ থেকে অনেককে আর্থিক পুঁজি দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ করে দেয়া হয়। যার মাধ্যমে অনেকের পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরছে, দূর হচ্ছে বেকারত্ব। এছাড়া কেউ যেন সিন্ডিকেট করে ডাবের বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে আমাদের এই সমিতির মাধ্যমে সেদিকেও সব সময় নজর রাখা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, ডাব চাষ করলে কম শ্রম ও স্বল্প খরচে ভালো লাভবান হওয়া যায়। এছাড়া বারো মাসই ডাব বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা। যার জন্য এরই মধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ডাব চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কয়েকটি প্রদর্শণী দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এই উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ডাব চাষ বৃদ্ধি পাবে। এ জন্য কেউ আগ্রহী হলে আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।