ঢাকা শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির অভিযোগ, কমছে উর্বরতা

কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রির অভিযোগ, কমছে উর্বরতা

হাটহাজারী পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষিজমি, সরকারি খাসজমি, পাহাড়, ছড়ার পাড়ের মাটি কেটে নিয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করছে কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র। রাতের আঁধারে ট্রাকের মাধ্যমে এই মাটি পাচার করা হচ্ছে ইটভাটা ও নির্মাণকাজ এবং পুকুর জলাশয়, সড়কের পাশের সরকারি (সওজর) জায়গা, ফসলি জমি ভরাট কাজে। এতে একদিকে যেমন কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। যার ফলে আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পাচ্ছে গোচারণ ভূমি, পুকুর জলাশয়, বীজতলা ও কৃষি জমি।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফসলি জমির মাটি বিক্রি ও ভরাটের হিড়িক পড়েছে পুরো উপজেলা জুড়ে। আর মাটিবাহী গাড়ির চাপে নষ্ট হচ্ছে আঞ্চলিক বিভিন্ন সড়ক এবং ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে চট্টগ্রাম খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রাম রাঙ্গামাটি মহাসড়কের বিভিন্ন অংশও। বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শন কালে মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রের সদস্য কারা তা জানতে চাইলে তারা নিজ প্রাণ ভয়ে চক্রের সদস্যদের নাম প্রকাশ না করলেও বলেন,

পৌরসভার ফটিকা বিল, মোহাম্মদপুর বিল, মাইজ বিল, ছাড়াও উপজেলার, মির্জাপুর, কাটিরহাট, সরকারহাট, ইছাপুর, গড়দুয়ারাসহ অসংখ্য স্থানে কাটা হচ্ছে কৃষি জমির টপসয়েল। সে মাটি সারা রাত ধরে ড্রাম ট্রাক যোগে পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ভরাট করা হচ্ছে বিভিন্ন পুকুর, জলাশয়, কৃষিজমিসহ সরকারি সওজের কোটি টাকার মুল্যবান সম্পদ। পুরো হাটহাজারীতে এখন দৌরাত্ম্য চলছে মাটি ব্যবসায়ী ও ভরাটকারীদের। হাটহাজারী পৌরসভার ফটিকা এলাকার বাসিন্দা প্রবাসী আবদুল সালাম তাওহিদ বলেন, সারারাত ধরে ড্রাম ট্রাকের শব্দে অতিষ্ট হয়ে উঠেছি। প্রতিদিন রাত ১২টার পর থেকে এ ড্রাম ট্রাকের উৎপাত শুরু হয়। চলে সকাল পর্যন্ত। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনকারী সদস্য মানবাধিকারকর্মী একরামুল হক চৌধুরী বলেন, এভাবে অবৈধভাবে মাটি কাটায় মাটির উপরিভাগে থাকা পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়, ফলে ভবিষ্যতে ওই জমিতে চাষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। একই সঙ্গে জমির মাটি কেটে নেয়ার ফলে মাটির জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে পানি সংকটের কারণ হতে পারে, এছাড়াও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও মাইক্রোঅর্গানিজমের আবাসস্থল নষ্ট হয়ে মাটির প্রাকৃতিক গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে।

আইনে উল্লেখ আছে নিজের জমি থেকেও কেউ মাটি কেটে বিক্রি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। হাটহাজারী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের কাছে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বন বিভাগের আওতাধীন কোনো স্থানে যদি পাহাড় কাটা হয় সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা বা ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবো। আর এর বাইরে হলে সেটা পরিবেশ অধিদপ্তর এবং উপজেলা প্রশাসন দেখবেন। বন বিভাগের ভুমির মধ্যে কোথাও পাহাড় কাটার খবর পেলে আমরা সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিবো। এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতেও বলেন তিনি। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম মশিউজ্জামান জানান, আমরা প্রায় সময় টপসয়েল কাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছি, স্কেবেটরের ব্যাটারি জব্দ করছি। গত সোমবার গভীর রাতেও অভিযানে গিয়ে পাহাড়ি মাটি ও টপসয়েল দিয়ে জায়গা ভরাট করা বন্ধ করেছি। পাহাড় ও টপসয়েল কাটার ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত