থোকায় থোকায় ঝুলছে অসংখ্য তেঁতুল। এমনিতেই তেঁতুলের কথা শুনলেই জিভে পানি চলে আসে। আর সেই তেঁতুল যদি হয় লাল টুকটুকে বর্ণের, তাহলে তো লোভটা আরো বেড়ে যায়। খাওয়ার জ্বন্য না হলেও লাল বর্ণের তেঁতুল ধরে গাছে এমন কথা শুনলেই যে কারোর ই সাধ জাগবে মনে সেটা দেখার জ্বন্য।
তাই এমনই লাল বর্ণের ব্যতিক্রমধর্মী তেঁতুল দেখতে দেশের দুর দুরন্ত থেকে ছুঁটে আসে দর্শনার্থীরা। বহু বছরের পুরাতন এই তেঁতুল গাছটিকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। গাছটিকে ঘিরে দেখতে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জ্বন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি পরিবেশবিদদের। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের হিজ্বলবট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী পুরাতন লাল তেঁতুল গাছ। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উসমানপুরের হিজ্বলবট এলাকায় গড়াই নদীর র্তীরবর্তী এই লাল বর্ণের তেঁতুল গাছ। তেঁতুল গাছের পাশেরই বাসিন্দা মুন্সি মোকাররম হোসেন। বয়সের ভারে প্রায় নুইয়ে পড়েছেন তিনি। তবে তার দাবি তেঁতুল গাছটি যেমন ইতোপূর্বে দেখেছিলেন প্রায় তেমনই রয়ে গেছে। মুন্সি মোকাররম হোসেন জানান, এখানে এক সারিতে এই তিনটি তেঁতুল গাছ রয়েছে। কে এই গাছ কবে লাগিয়েছে তা আমরা জানি না। তবে আমি শুনেছি যে ব্রিটিশ শ্বাসনামলে এই তিনটি গারে চারা রোপন করা হয়। তিনটি তেঁতুল গাছের মধ্যে একটিতে লাল বর্ণের তেঁতুল ধরে। আর দুটো গাছে সাধারণ যে বর্ণের তেঁতুল হয় সেই রকমই ধরে। যেটাতে লাল তেঁতুল ধরে, বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই কোনটা কোন বর্ণের তেঁতুল। তবে ভাংলে কাঁচা অবস্থায় ভেতরটা টকটকে লাল বর্ণের। আবার পাকলে এই তেঁতুলের রং একই রকম হয়ে যায়।’ তিনি আরো বলেন, অনেকেই মনে করে যে তেঁতুলের রং লাল হওয়ার এর স্বাদ ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু না, সাদা তেঁতুলও যেমন টক, লাল তেঁতুলও তেমনই টক। তিনি বলেন, ‘এলাকাবাসীর ধারণা, ব্রিটিশ আমনে এখানে নীল চাষ হতো। সে সময় এখানে নীলকরদের বাড়ি ছিলো। পরবর্তীতে যা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শেষ হয়ে গেছে। তবে তাদের রোপণকৃত এই তেঁতুল গাছ তিনটি এখনো রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার আলী জানান, তিনটি গাছের তেঁতুলের স্বাদ ও গন্ধের কোন পার্থক্য নেয়। তবে একটা গাছের তেঁতুল শুধুমাত্র কাঁচা অবস্থায় লাল সিঁদুরের মতো। তাই অনেক দূর-দূরন্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই লোকজ্বন আসে এই তেঁতুল ও গাছ দেখতে।
রাশেদা বেগম নামের একজ্বন নারী জানান, এই তেঁতুল খেতে সাধারন তেঁতুলের মতো হলেও রং টা খুবই সুন্দর। রক্তের মতো লাল বর্ণের। এই তেঁতুল দিয়ে আমরা গ্রামের মহিলারা খুব সুন্দর আঁচার তৈরি করি। যখন দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম পড়ে তখন আমরা এই গাছ তলায় বসি। অন্য জাইগার চেয়ে তেঁতুল গাছ তলায় ঠান্ডা থাকে। ছোট বাচ্চারা সারাদিন এই তেঁতুল গাছ তলায় খেলাধুলা করে। আর বাইরে থেকে যখন লোকজ্বন আসে তখন আমাদেরও খুব ভালো লাগে।
এলাকাবাসীর দাবি, পুরাতন এই লাল বর্ণের তেঁতুল গাছ দেখতে প্রতিদিনই যেহেতু লোকজ্বন আসে। এটাকে যদি সরকারী ভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে, দর্শনার্থীদের বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে সরকারি রাজ্বস্ব আসবে সেই সঙ্গে গাছগুলো সংরক্ষিত থাকবে। পরিবেশবিদ গৌতম কুমার রায় জানান, কাঁচা অবস্থায় তেঁতুলের ভেতরটা লাল বর্ণের হলেও স্বাদের দিক দিয়ে কোন ভিন্নতা নেই। এই বর্ণের তেঁতুল গাছ পাওয়া বিরল। যেহেতু তেঁতুল গাছ অক্সিজেন বেশি সর্বারহ করতে পারে এ জ্বন্য এটা পরিবেশের জ্বন্য খুবই উপকারী। এ ধরনের গাছকে সংক্ষণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে এর বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করে সারাদেশে রোপণ উপযোগী করলে এই লাল বর্ণের তেঁতুলের উৎপাদন বাড়বে।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজ্বওয়ানুল ইসলাম জানান, বিজ্ঞানির মতে সাউথ এশিয়ায় এ ধরনের লাল তেঁতুলের অস্তিত্ব মেলে। যা মানবদেহের জ্বন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ধরনের গাছগুলোকে বিস্তারে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বিলুপ্ত হতে পারে আমাদের দেশ থেকে।