ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পরিত্যক্ত মাছের আঁশ রোদে শুকিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে। যা স্থানীয় ব্যাপারীদের হাত ধরে যাচ্ছে রাজধানীর ঢাকায় রপ্তানিকারকদের হাতে। সেখান থেকে প্রক্রিয়া জাতের মাধ্যমে চীন, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এসব মাছেন আঁশ। পরিত্যক্ত মাছের আঁশ বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অনেক জেলে পরিবার। মাছের আঁশ বিক্রির সাথে জড়িতরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের আনন্দবাজার, মেড্ডা বাজার, ফারুকী বাজার, বউ বাজার, পীরবাড়ি বাজার, কাউতলী বাজার, বর্ডার বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে মাঝারি থেকে বড় আকারের কার্প জাতীয় মাছ, রুই, কাতল, মৃগেল মাছ নিয়মিত বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাছের বেশিরভাগ ক্রেতাই খুচরা পর্যায়ের। ফলে ক্রেতাদের অধিকাংশ বাজার থেকে ক্রয়কৃত মাছগুলো প্রতিদিনের ন্যায় মাছ কাটুয়াদের মাধ্যমে পিস করে বাড়িতে নিয়ে যান। আর মাছগুলো কাটার সময় নাড়ি-ভুঁড়ি মাছের পরিত্যক্ত অনেক অংশ ফেলে দেয়া হয়। যারা মাছ কাটে তাদের বলা হয় ‘মাছকাটুয়া’। সেই মাছকাটুয়ারা মাছ কাটার আগেই মাছের আঁশগুলো আলাদা করে রাখেন। কারণ তারা জানেন, মাছের আঁশগুলো বিক্রয় যোগ্য পণ্য। তাই তারা মাছের আঁশগুলো আলাদা করে রেখে দেন। পরে আঁশগুলো রোদে শুকিয়ে বস্তায় ভরে রাখেন। পরে স্থানীয় পাইকার বা ব্যাপারীদের মাধ্যমে প্রতি বস্তা ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন। কেজি হিসেবে বাজার দর ক্রমে ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। জেলা শহরের তিতাস নদীর তীরে প্রতি দিন পূর্ব-পাইকপাড়া, কান্দিপাড়া মাইমল হাটি, তিতাসের পূর্বপাড় সীতানগর, কাশিনগর গ্রামে মাছের আঁশ শুকানোর চিত্র দেখা যায়। জেলা শহরের আনন্দ বাজারে মাছ কাটার সাথে যুক্ত জসিম জানান, এ বাজারে দীর্ঘদিন ধরে মাছ কাটার সাথে তিনি যুক্ত আছেন। প্রতিদিন অনেক মাছ কাটেন তিনি। এসব মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণ আঁশ বের হয়। এই আঁশগুলোর মধ্যে বড় কার্প মাছ অন্যতম। পরে মাছের আঁশগুলো সংগ্রহ করা হয়। ধারাবাহিকভাবে এই মাছের আঁশগুলো শুকিয়ে সংগ্রহ করা হয়। জসিম আরো জানান, রুই, কাতল, মৃগেল, ঘাসকার্প, কমন কার্প জাতীয় মাছের আঁশগুলো সংগ্রহ করা হয়। পরে পানিতে ভালোভাবে ধুইয়ে মাছের আঁশ থেকে রক্ত এবং চর্বি পরিষ্কার করা হয়। পরে কয়েক ধাপে সেগুলোকে রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানোর পর বস্তায় ভরে রাখা হয় এবং পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হয়।
মেড্ডা বাজারে মাছ কাটার সঙ্গে যুক্ত দিলীপ দাস জানান, মাছ কাটি প্রতিদিন। মাছ থেকে অনেক আঁশ বের হয়। মাছ কাটা শেষে প্রতিদিন বিকালে আঁশ জমিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। পরে ভালো করে ধুয়ে চাটাইয়ের মধ্যে শুকিয়ে বিক্রির উপযোগী করে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে থাকি। আঁশ শুকানোর কাজে জড়িত পূর্ণীমা দাস নামে এক গৃহবধূ জানান, মাছের আঁশ শুকিয়ে তিনি মাসে ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। এ ক্ষেত্রে তাকে প্রতিদিন মাছের আঁশ শুকানোর পেছনে সময় দিতে হয়। তারপরে কাঙ্ক্ষিত আয় হওয়ায় বেশ খুশি তিনি। আনন্দ বাজারের মাছ ব্যবসার সাথে যুক্ত সুমন মিয়া জানান, এসব মাছের আঁশ চীনসহ বিভিন্ন দেশে যায়। মাছের আঁশ থেকে ওষুধ, ফুড সাপ্লিমেন্ট ও কসমেটিকস শিল্পে ব্যবহার হয়।
এছাড়া ব্যাটারি তৈরি, বৈদ্যুতিক পণ্য, কৃত্রিম কর্নিয়া ও পোলট্রির খাদ্য, ক্যাপসুল তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় বলে পাইকারদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। আর এর থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গড়ে অন্তত ৫০টি পরিবার মাছের আঁশ শুকানোর সাথে জড়িত বলে জানান তিনি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া মাছ ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে জেলা শহর থেকে প্রতি মাসে অন্তত ৫ লাখ টাকার মাছের আঁশ বিক্রি হয় বলে জানা গেছে।