শ্যামনগরে অনুমোদনবিহীনভাবে চলছে অর্ধ শতাধিক অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। নিয়ম না মেনে অনুমোদনবিহীনভাবে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো দীর্ঘ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্যসেবার নামে বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চলে রোগীদের হয়রানি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর আগে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য থাকতে হয় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট ও প্রয়োাজনীয় যন্ত্রপাতি। শুধু তাই নয়, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের লাইসেন্স, পরিবেশ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। ড্রাগ লাইসেন্স, নারকোটিস লাইসেন্স ছাড়াও, প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট ও টিন সার্টিফিকেট থাকতে হয়। ক্লিনিক থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু করতে হলে অব্যশই পরমাণু রেডিয়েশনের ছাড়পত্র লাগে। সব নিয়ম অনুযায়ী আবেদন বৈধ হওয়ার পর প্রতি অর্থবছরে নবায়ন করতে হয়। কিন্তু শ্যামনগরের অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রেই মানা হচ্ছে না এসব নিয়ম কানুন। এছাড়া সরকারি বিধিমালায় নিয়ম আছে- সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০০ গজের ভিতর ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার করা যাবে না। এই নিয়ম না মেনেও হাসপাতালের আশপাশে গড়ে উঠেছে স্বাস্থ্যসেবার নামে অনেক বেসরকারি ক্লিনিক। এদিকে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই শ্যামনগর পৌরশহরসহ ১২ ইউনিয়নে চলছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো। ফলে অসহায় মানুষের গলাকাটা মহাৎউসব চলছে এসব অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালে। একই সঙ্গে দালালের খপ্পরে পড়ে দিনের পর দিন প্রতারিত হচ্ছে অসহায় মানুষ। আর লাভবান হচ্ছেন কতিপয় দালাল ও অসাধু ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা। অনুমোদনহীন এসব হাসপাতালে চিকিৎসার নামে ব্যবসা, প্রতারণা, রোগী ভোগান্তির অভিযোগ উঠছে হরহামেশাই। এছাড়াও এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে প্রায় সময়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও ওঠে। শ্যামনগরের মোড়ে মোড়ে গড়ে উঠেছে অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে নেই অ্যাম্বুলেন্স, নেই এনেস্থেসিয়া ডাক্তার, নেই অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা। এখানে নেই প্রশিক্ষিত নার্স। তবুও চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগী আসমত সরদার জানান, এসব অনুমোদনবিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সেবা দেয়ার চেয়ে অর্থনৈতিক হয়রানি করে বেশি। এদের মূল উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে চিকিৎসার নামে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া। কোনো পদক্ষেপ না থাকায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্লিনিকের সংখ্যা। তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় ৫০টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তথ্য আছে সিভিল সার্জনের কাছে। এই তথ্যের বাইরেও শহরের আনাচে কানাচে, হাটে, মোড়ে, অলিতে-গলিতে চোখে পড়ে শতাধিক অবৈধ ক্লিনিক।